হিমাচল প্রদেশের আর্থিক পরিকাঠামোর মূল ভিত্তিই হল পর্যটন। আর তাই সেখানে ইনস্ট্যান্ট ফুড হোক বা সফ্ট ড্রিঙ্ক – বিক্রি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সমীক্ষা মতে, প্রতি মাসে শিমলায় প্রায় ২,৮০০ টন বিয়োজন-অযোগ্য বর্জ্য জমা হয়, অন্যদিকে মানালিতে হয় ১,১০০ টন। ‘ট্যুরিস্ট সিজন’-এ তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া, পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে সেখানকার বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও তেমন উন্নত নয়। আর তাই পরিবেশের ক্ষতিও হয়ে চলেছে অবাধে।
প্রায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে আবর্জনার স্তুপ। প্লাস্টিকের প্যাকেট, কাচের বোতল, খাবারের অবশেষ, কী নেই তাতে! তার মধ্যে আবার খাবারের খোঁজ করছে পথকুকুরের দল। ভাগ বসাচ্ছে কাকেরাও। এই দৃশ্য যেকোনও ভাগাড়ের হলে হয়তো অবাক হতে হত না। কিন্তু মানুষের অত্যাচারে নৈসর্গিক হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) বনাঞ্চলের যখন এই হাল হয়, তখন তা চিন্তা জাগায় বইকি! ইতিমধ্যেই এক্স-হ্যান্ডেল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে হিমাচলের কাসোলে অবস্থিত এক জঙ্গলের নানান ভিডিও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, পার্বতী ও বিয়াস নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত পার্বতী উপত্যকা ভরে গিয়েছে নানান রকমের জৈব-অভঙ্গুর আবর্জনায়। আর এই আবর্জনার সিংহভাগই এসেছে পর্যটকদের হাত ধরে। অর্থাৎ, যে চোখ-জুড়ানো প্রকৃতির বুকে ছুটি কাটাতে আসছেন তাঁরা, ফেরার সময়ে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন জীবনভর সংরক্ষণ করার মতো স্মৃতি, সেই জায়গাকেই পরিবর্তে দিয়ে যাচ্ছেন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!
আর তাই এই অবস্থার মোকাবিলা করতে সেখানকার কর্তৃপক্ষ চালু করল ‘রিটার্ন ইওর ট্র্যাশ’ নামে এক অভিনব প্রকল্প। এই স্কিমের আওতায় নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের পণ্য কেনার সময়েই বাড়তি কিছু টাকা জমা রাখতে হবে পর্যটকদের। যদি পরবর্তীকালে সে পণ্যের খালি প্যাকেট তাঁরা ফেরত দিতে পারেন, তবে জমা রাখা টাকাও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সমগ্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কিউ আর কোডের মাধ্যমে স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এর সাহায্য ডিপোজিট ফি-এর হিসেব রাখা, বা তা ফেরাতে সুবিধে হবে ক্রেতার।
যদিও পরিবেশবিদেরা বলছেন, এমন উদ্যোগ কতখানি সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। কারণ হিমাচল প্রদেশ এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে আগেও। ১৯৯৫ সালে ‘হিমাচল প্রদেশ নন-বায়োডিগ্রেডেবল গারবেজ (কন্ট্রোল) অ্যাক্ট’ চালু করেছিলেন তৎকালীন সরকার। এরপর ২০০৯ সালে সেখানে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্যারি ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আবারও ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার ব্যান করেন থার্মোকলের তৈরি বাসন, যেমন কাপ, প্লেট, চামচ, গ্লাস ইত্যাদি। কিন্তু এসব কিছুর পরেও বর্জ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আজকের দিনটি এসে দাঁড়িয়েছে।
বলা বাহুল্য, হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) আর্থিক পরিকাঠামোর মূল ভিত্তিই হল পর্যটন। আর তাই সেখানে ইনস্ট্যান্ট ফুড হোক বা সফ্ট ড্রিঙ্ক– বিক্রি উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। সমীক্ষা মতে, প্রতি মাসে শিমলায় প্রায় ২,৮০০ টন বিয়োজন-অযোগ্য বর্জ্য জমা হয়, অন্যদিকে মানালিতে হয় ১,১০০ টন। ‘ট্যুরিস্ট সিজন’-এ তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া, পাহাড়ি এলাকা হওয়ার কারণে সেখানকার বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাও তেমন উন্নত নয়। আর তাই পরিবেশের ক্ষতিও হয়ে চলেছে অবাধে। হিমাচল প্রদেশের মন্ত্রী হর্ষবর্ধন চৌহান এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, কেবল এককালীন আবর্জনা কমানোতেই সীমাবদ্ধ নয় এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। বরং স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা যাতে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হন, সেই চেষ্টা করা হবে।
তবু প্রশ্ন থেকে যায় এহেন উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল পরিবেশ সচেতনতা। কোনও জায়গায় বেড়াতে গেলে সেখানকার পরিবেশের উৎকর্ষতা যেন বজায় থাকে, সে দায়িত্ব নিঃসন্দেহে পর্যটকেরও। সত্যিই কি বর্জ্যের বদলে টাকা ফেরত পাওয়া গেলে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি হবে সাধারণের মধ্যে? নাকি নজরদারির আড়ালে চলতে থাকবে আগের মতোই? প্রশ্ন থেকে যায়, যার উত্তরের উপর নির্ভর করে হিমাচল প্রদেশের আগামী দিন।