‘অগ্নিপথ’-বিক্ষোভ চলছেই। রেল-সড়ক অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ-আন্দোলন। তবে সে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই বের হয়ে গিয়েছে প্রথম পর্যায়ের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। সরকারের ওই জনবিরোধী নীতি মানতে নারাজ মানুষও। প্রকল্পের বিরোধিতায় এবার তাই বিক্ষোভের পাশাপাশি বয়কটের পথে এগোল এ দেশেরই একটি রাজ্য। অগ্নিপথ প্রকল্পে চাকরির আবেদন করলে, তাঁকে একঘরে করবে গোটা সমাজ। এবার এমনই ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিল হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত। তাদের সেই সিদ্ধান্তে পাশে রয়েছে স্থানীয় কৃষক সংগঠনও। এছাড়াও আরও একগুচ্ছ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা। কী কী বলা হয়েছে সেই নির্দেশিকায়, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করার জন্য ইতিমধ্যেই নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। চার বছরের ওই কাজে না থাকবে কোনও পেনশন, না অন্যান্য সুবিধা। শুধুমাত্র এককালীন একটি টাকা হাতে ধরিয়ে দায়িত্ব থেকে হাত ধুয়ে নেবে সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় সেনাবাহিনীতে যেতে ইচ্ছুক চাকরিপ্রার্থীরা। সরকারের ওই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প জনবিরোধী, এমন দাবি করে দেশ জুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রতিবাদের ঝড়। জায়গায় জায়গায় চলেছে অবরোধ, ভাঙচুর। আগুন দেওয়া হয়েছে একাধিক ট্রেনে। নষ্ট হয়েছে সরকারি সম্পত্তি। বিক্ষোভের মুখে ‘অগ্নিবীর’-দের জন্য ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করলেও নিজেদের অবস্থানে অনড় কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগের জন্য প্রথম পর্যায়ের বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে কেন্দ্র। যেখানে ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর জন্যই নিয়োগ হবে বলে জানানো হয়েছে। চার বছর পরে তার মধ্যে থেকে ২৫ শতাংশ কর্মীকে ১৫ বছরের চাকরিতে নেওয়া হলেও হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশের জন্য রাখা শুধুই অনিশ্চয়তা।
আরও শুনুন: ‘এখনই কাজ দিন, কেন অগ্নিপথের অপেক্ষা?’ আনন্দ মাহিন্দ্রাকে প্রশ্ন প্রাক্তন সেনাকর্মীদের
ব্যাপারটি নিয়ে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গোটা দেশ। আর সেই ক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যে এ ব্যাপারে এবার কঠোর সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চাইছে হরিয়ানা। সেখানকার খাপ পঞ্চায়েত ও কৃষক সংগঠন সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব চাকরিপ্রার্থীরা ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় চাকরির জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের একযোগে বয়কট করবে গোটা সমাজ। তাঁদের ব্রাত্য করা হবে সমাজের সমস্ত স্বীকৃতি থেকে।
শুধু ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে যেতে চাওয়া চাকরিপ্রার্থীদেরই নয়, বিজেপি-জেজিপি নেতাদেরও বয়কটেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। এমনকী যেসব কর্পোরেট সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পকে সমর্থন করবে, তাঁদেরকেও বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাপ পঞ্চায়েত।
প্রসঙ্গত, অগ্নিপথ প্রকল্পে যোগ দেওয়া ‘অগ্নিবীর’দেরকে নিজের কর্পোরেট সংস্থায় কাজ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ভারতীয় শিল্পপতি ও ধনকুবের আনন্দ মাহিন্দ্রাও। এ নিয়ে প্রাক্তন সেনাকর্মী ও জওয়ানদের রোষের মুখেও পড়েন তিনি। সেনাবাহিনীর স্থায়ী কর্মী যাঁরা, অর্থাৎ ১৫ বছরের চাকরিতে যাঁরা বহাল হন, অবসরের পরে তাঁদেরই দ্বিতীয় চাকরি খুঁজতে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। ফলে ‘অগ্নিবীর’দের ক্ষেত্রে যে অবস্থাটা আরও শোচনীয় হবে, তা আঁচ করাই যায়।
আরও শুনুন: ‘ভোটের বদলে বাম্পার সেল চালু করলেই হয়’, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে সরব স্বরা ভাস্কর
গত বছর কৃষকবিরোধী নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করে যথেষ্ট বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল মোদি সরকারকে। দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে অবশেষে সেই আইন তুলে নিতে বাধ্য হয় তারা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই অগ্নিপথ প্রকল্পকে ঘিরে ফের প্রতিরোধের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু হরিয়ানাই নয়, বিহার, পঞ্জাব, রাজস্থান, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে উঠে এসেছে তীব্র বিরোধিতা। বাদ যায়নি বাংলাও। এখনও পর্যন্ত বিক্ষোভের জেরে বাতিল হয়েছে সাড়ে তিনশোরও বেশি ট্রেন। আগুন, ভাঙচুর, সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এর মধ্যেই সামনে এল হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের নয়া নির্দেশিকা। রুজির প্রশ্নে যে যে কোনও সীমা পর্যন্ত তাঁরা যেতে পারেন, সেই অবস্থানই সম্ভবত ফের একবার পরিষ্কার করে দিল হরিয়ানা।