পঁচাত্তর বছর পার হয়ে গিয়েছে দেশের স্বাধীনতার। অথচ সত্য়ি কি বদলেছে দেশ? আর সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটাই ফের তুলে ধরলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার। সম্প্রতি রাজস্থানে দলিত এক ছাত্রকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মুখ খুললেন মীরা। ঠিক কী বললেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দলিত হওয়ার ‘অপরাধে’ সম্প্রতি পিটিয়ে খুন করা হয়েছে দলিত একটি শিশুকে। ভুল করে শিক্ষকের জলের বোতল থেকে জল খেয়ে ফেলেছিল খুদে। স্রেফ সেই ‘অপরাধেই’ তাকে নির্মম ভাবে মারধর করেন বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষক। চোখে ও কানে গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ন’বছরের ওই ছাত্রকে। মারধরের ফলে তাঁর কানের শিরা ফেটে গিয়েছিল। মারাত্মক চোট ছিল শরীরেও। উদয়পুর থেকে চিকিৎসার জন্য পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আমদাবাদেও। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ২০ দিন মৃত্য়ুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ওই খুদের। রাজস্থানের ওই ঘটনার পরে তোলপাড় গোটা দেশ। এমনকী বেশ কিছু জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে হিংসাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্থানের বিচ্ছিন্ন এলাকায় বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট পরিষেবা।
আরও শুনুন: ‘কেন মুসলিমকে দেওয়া হল জাতীয় পতাকা তৈরির বরাত?’, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ বয়কটের ডাক হিন্দু ধর্মগুরুর
দলিত নির্যাতনের ঘটনা এ দেশে কোনও নতুন বিষয় নয়। কখনও দলিত হওয়ার অপরাধে মেলে না চিকিৎসা, কোথাও দেওয়া হয় না সৎকারের সুযোগ। কোথাও আবার দলিতের হাতের রান্না খেতে আপত্তি জানানো হয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর কেটে গেলেও সেই তিমিরে আলো জ্বলেনি আজও। দেশের সংবিধানপ্রণেতা ছিলেন একজন দলিত মানুষ। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও ছিলেন দলিত সম্প্রদায়েরই মানুষ। অথচ এ সমস্ত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থেকে গিয়েছে খালি। দেশের সামগ্রিক ছবিটা বদলায়নি আজও। আর সে কথাই ফের নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে মনে করিয়ে দিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার। তুলে দিলেন মারাত্মক এক প্রশ্ন।
আরও শুনুন: নয়া সংসদ ভবনের জন্য অনুদান দিতে ‘কয়েন যাত্রা’ দলিত সম্প্রদায়ের, মিলল না কেন্দ্রের অনুমতি
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজস্থানের ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে মীরা ভাগ করে নিয়েছেন ব্যক্তিগত একটি গল্প। মীরা সেখানে জানিয়েছেন, তিনি নিজেও একজন দলিত সম্প্রদায়েরই মানুষ। তাঁর বাবা বাবু জগজীবন রামকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল একই রকম একটি ঘটনার। স্কুলে রাখা জলের ড্রাম থেকে জল খেতে বাঁধা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অপরাধ সেই একই। দলিত বলে সর্বজনীন জলের জায়গা থেকে জল পান করার অনুমতি পাননি জগজীবন রাম। মীরা জানান, সৌভাগ্যবশত তাঁকে মার খেয়ে বেঘোরে মরতে হয়নি এই শিশুটির মতো। প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা এটা। তার পর সময় বদলেছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে দেশে। অথচ বাস্তবটা আজও একই রকম রূঢ় বলে জানান প্রাক্তন স্পিকার। তিনি আরও জানান, ব্রিটিশ শত্রুর হাত থেকে স্বাধীনতা এলেও, আজও, দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও জাতিপ্রথা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। টুইটারে সেই কথাটাই সকলকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন মীরা।
আর তাঁর সেই বক্তব্য সত্যিই সমাজের সামনে সেই কঠিন প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে আরও একবার। সময় এগোচ্ছে। দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। তবে সত্যিই কি এগোচ্ছে দেশ? নাকি আজও ধর্মীয় বিভাজন, জাতিভেদের মতো কঠিন অসুখ আজও বসে রয়েছে সভ্যতার গহিনে!আজও, এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও সেই প্রশ্নেরই উত্তর হন্যে হয়ে খুঁজছে গোটা দেশ।