সন্তান খুনের বদলা নিতে মহারাষ্ট্রে আড়াইশোটি কুকুরছানাকে হত্যা করল বাঁদরেরা। কাম, ক্রোধ, মোহ- এসব তো রিপু তো মানুষের অর্জন! জন্তুজানোয়ারদের মধ্যেও তবে বদলা নেওয়ার খেলা চলে! প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠতে পারে বন্যজন্তুরাও? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
একটি বাঁদরছানাকে মেরে ফেলেছিল এলাকারই একদল কুকুর। তার পরিণাম এমন হবে ভাবতে পারেননি মহারাষ্ট্রের বীড় জেলার মজলগাঁও এলাকার বাসিন্দারা। গত একমাসে এলাকার প্রত্যেকটি কুকরছানাকে খুঁজে খুঁজে মেরেছে বাঁদরবাহিনী। এখনও পর্যন্ত আড়াইশোটি কুকুরছানার মৃত্যু হয়েছে গ্রামে। কুকুরছানা দেখলেই তুলে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে বানররেরা। কুকুরছানা বাঁচাতে গিয়ে চোট পেয়েছেন অনেক স্থানীয়ও। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এলাকার বাচ্চাদের দেখলেও তাড়া করছে বাঁদরেরা। এখন ওই গ্রামে কুকুরছানা নেই বললেই চলে।
আরও খবর: মায়ের খুনের বদলা, ছোট্ট প্রাণীটি কী করেছিল জানেন?
বানরের এমন প্রতিহিংসার ছবি দেখে শিউরে উঠেছে নেটবিশ্ব। মানুষে মানুষে প্রতিহিংসা, খুনোখুনি দেখা যায় বটে; তবে পশুদের মধ্যে এমন নিদারুণ বদলা নেওয়ার প্রবণতা থাকে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
নিউ জার্সির কিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ভ্লাদিমির ডাইনেটস জানিয়েছেন, জন্তুজানোয়ারদের মধ্যে প্রায়শই এই প্রবৃত্তি দেখা যায়। শিম্পাঞ্জি থেকে শুরু করে ম্যাকাও বা হাতি – অনেক জন্তুজানোয়ারের মধ্যেই রয়েছে এই প্রবণতা। অনেক সময় সরাসরি শত্রুকে না পেলে তাদের আত্মীয়দের উপরেই বদলা নিতে শুরু করে তারা।
আহত বা গুলিবিদ্ধ পশুটি ঝাঁপিয়ে পড়েছে শিকারির উপরে, এমন ঘটনা তো আখছার ঘটছে। এ দিকে, সে সময় পালিয়ে যাওয়াটাই হয়তো বেশি বুদ্ধিমানের কাজ পশুটির পক্ষে। জন্তুজানোয়ারের এইরকম ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছেন অধ্যাপক ভ্লাদিমির। তিনি জানাচ্ছেন, প্রতিহিংসার জন্ম আসলে সুবিচার পাওয়ার ইচ্ছা থেকে। তা যেমন মানুষের মধ্যে আছে, তেমন আছে পশুদের সমাজেও। নিউ ইয়র্কের ক্যানিসিয়াস কলেজের ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন বিভাগের সহ-অধ্যাপক মালিনি সুচক আবার জানিয়েছেন, অনেক সময় স্ট্রেস বা চাপের কারণেও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠতে পারে প্রাণীরা। পোষ্যদের ক্ষেত্রে তো এ ব্যাপারটি খুবই লক্ষ্য করা যায়।
আরও খবর: এই ব্রিজে উঠলেই আত্মহত্যা করে বসে পোষা কুকুরেরা, কেন জানেন?
জন্তু জানোয়ারদের মনের হদিশ বা সাইকোলজি বোঝা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। তবে শুধু বাঁদরদের মধ্যেই নয়, বহু ক্ষেত্রেই বহু প্রাণীকেই এমন প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠেতে দেখা গিয়েছে।
এক বার এক পোচারকে খুঁজে খুঁজে মেরে এসেছিল একটি বাঘ। ঘটনাটি ঘটেছিল কেরলে। একটি বাঘিনীকে হত্যার বদলা নিয়েছিল বাঘটি। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল একটি চিতাবাঘকে কেন্দ্র করে। সেই মহিলা চিতাবাঘটিতে হিমাচল থেকে উত্তরাখণ্ড হয়ে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাস্তার মধ্যে হঠাৎ করেই শোরগোল শুরু করে দেয় চিতাবাঘটি। পরে জানা যায়, পোচারেরা ওই পথ দিয়েই চিতাবাঘটির দুটি ছানাকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে। নিজের সন্তানদের গন্ধ বা কোনও চিহ্ন টের পেয়েছিল চিতাবাঘটি। হাতির ক্ষেত্রে তো এই প্রতিহিংসা বোধ ও মনে রাখার ক্ষমতা দুটোই মারাত্মক রকমের বেশি। অনেক সময়ই দেখা যায় গাড়ি দেখলেই তাঁর পিছনে হিংস্র ভাবে তাড়া করছে রাস্তার কোনও কুকুর। হয়তো বা গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছে অন্য কোনও কুকুর বা তারই সন্তান। তার বদলা নিতে গাড়িকে এ হেন তাড়া।
বাকি অংশ শুনে নিন।