ভগবান নাকি সর্বক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু কোর্ট-কাছারি তো তিনি আর করতে পারবেন না। তাহলে তাঁর হয়ে আইনি লড়াই লড়বেন কে? কোর্ট বলছে, ভগবানের বন্ধু অর্থাৎ ভক্তরাই লড়বেন ভগবানের অধিকার আদায়ে। সম্প্রতি ইদগাহ মসজিদ মামলায় এ কথা আবার মনে করিয়ে দিল মথুরার আদালত। আসুন শুনে নিই।
জ্ঞানবাপীর পর শাহি ইদগাহ মসজিদ। উঠেছে একই দাবি। ধ্বংস হয়ে যাওয়া মন্দির বা হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের পুনর্জাগরণ চাইছেন একদল মানুষ। মথুরার এই মসজিদ ঘিরে বিতর্ক অবশ্য আজকের নয়। কৃষ্ণজন্মভূমির একটি অংশ দখল করেই ওই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন অনেকে। দাবি উঠেছে যে, জ্ঞানবাপীর মতো সেখানেও রয়ে গিয়েছে হিন্দু দেবদেবীর অনুসঙ্গ। পাশাপাশি ওই গোটা সম্পত্তিটাই কাটরা কেশব দেবের বলে দাবি করে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন আবেদনকারীরা। সেই মামলা চলছে মথুরা আদালতে।
২০২০ সালে রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী নামে এক ব্যক্তি ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান’-এর তরফে মামলা দায়ের করেন। কৃষ্ণ জন্মভূমির ১৩.৩৭ একরের অধিকার ও ইদগাহ মসজিদের অপসারণ চেয়ে দ্বারস্থ হন আদালতের। অভিযোগ, সপ্তদশ শতকে কেশব দেবের মন্দির দখল করে সেখানে মসজিদ গড়ে তুলেছিলেন ঔরঙ্গজেব। বছর দুয়েক পর ফের সেই দাবি উঠেছে। জ্ঞানবাপীর মতোই ইদগাহ মসজিদের ভিতরেও আছে হিন্দু দেবদেবীর অস্তিত্ব। তা নষ্ট করে দেওয়া হতে পারে, এমনটা আশঙ্কা করে আপাতত ইদগাহ মসজিদ বন্ধেরও দাবি তোলা হয়েছে। এমনকি সিসিটিভি বসানোরও আরজি জানানো হয়েছে আদালতে।
আরও শুনুন: বেনজির শাস্তি প্রশাসনের! দলিত-মিছিলে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ৪৮টি বাড়ি
আর সেই মামলার শুনানিতে আদালত জানিয়েয়েছে, ভগবানের হয়ে আইনি লড়াই লড়ার অধিকার রয়েছে ভক্ত বা পূজারীরই। ঈশ্বরের বন্ধু হিসেবে তাঁর বিশেষ ভক্ত অনায়াসেই দেবতার সম্পত্তির জন্যও আইনি লড়াই লড়তে পারেন, আর সেই ক্ষমতা তাঁকে দিয়েছে সংবিধান। শুনানিতে মন্দির পক্ষের আইনজীবী গোপাল খান্ডেল দাবি করেন, পুরসভার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩.৩৭ একরের ওই জমিটির মালিকানা কাটরা কেশব দেবের। এমনকি ওই জমির জলকর থেকে শুরু বাদবাকি করও জমা পড়ে তাঁর নামেই।
ঈশ্বরের অধিকারের জন্য এমন লড়াই নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও রাম জন্মভূমি মামলায় ‘রামলালা বিরাজমান’-এর পক্ষে ‘রামলালার বন্ধু’ হিসাবে মামলা দায়ের করেন ভিএইচপি কার্যকরী প্রেসিডেন্ট দেওকি নন্দন আগরওয়াল। এমনকি সেই মামলায় প্রধান মামলাকারীর আখ্যা দেওয়া হয়েছিল রাম জন্মভূমিকেও। উত্তরাখণ্ডের একটি মামলায় একবার মামলাকারীর ভূমিকায় ছিল খোদ গঙ্গা নদী। জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একটি অংশ শৃঙ্গার গৌরীর আরাধনাস্থল দখল করে জ্ঞানবাপী মসজিদ গড়ে উঠেছে বসে আদালতের দ্বারস্থ হন ‘ভগবান বিশ্বেশ্বরের বন্ধু’ নামে এক মামলকারী।
আরও শুনুন: জ্ঞানবাপী-বিতর্কে ওয়াইসিকে তোপ মালব্যের, মসজিদে রয়েছে আরও দেবদেবীর মূর্তি, দাবি অজয় মিশ্রের
রামলালা ও বিশ্বেশ্বরের পরে এবার শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান-এর হয়ে আইনি লড়াই লড়ছেন হিন্দুপক্ষ। যা নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশজুড়ে। ইতিমধ্যেই বাড়ানো হয়েছে ইদগাহ মসজিদ চত্বরের নিরাপত্তা। এরই মধ্যে আবার হাই কোর্টে মামলা করেছেন মসজিদপক্ষ। এদিকে, ১৯৬৮ সালে মন্দির ট্রাস্ট ও মসজিদ কমিটির মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি ঘিরে বেড়েছে জল্পনা। সব মিলিয়ে কত দূর গড়ায় এই মামলার জল, সেটাই এখন দেখার। ২০ জুলাই মথুরা আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ভগবানের অধিকার ভক্তেরা আইনি লড়াইয়ে কি ছিনিয়ে আনতে পারবেন, আপাতত আদালতের কাছেই তোলা আছে সে প্রশ্নের উত্তর।