রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর মহাশ্বেতা দেবী। সিলেবাস থেকে ফের বাদ পড়ল বরেণ্য বাঙালি সাহিত্যিকের রচনা। দিনকয় আগে উত্তরপ্রদেশের সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল রবি ঠাকুরের লেখা। আর, এবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি কোর্স থেকে বাদ পড়ল মহাশ্বেতা দেবীর লেখা।
তাঁর সাহিত্য প্রান্তিকের কণ্ঠস্বর। তাঁর লেখনী বরাবর তুলে ধরেছে অগণন সাধারণ মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, দৈনন্দিনের পদাবলি। বাজারসভ্যতার ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে তাঁর লেখনী বরাবর ছিল মানুষের আত্মার আত্মীয়। তিনি মহাশ্বেতা দেবী। সাহিত্যকীর্তির জন্য জ্ঞানপীঠ সম্মানে যাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। সেই মহাশ্বেতা দেবীর লেখাই এবার বাদ পড়ল দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইংরেজির সিলেবাস থেকে। যা নিয়ে ঘনিয়ে উঠেছে জোর বিতর্ক।
আরও শুনুন: অঞ্জনের গানে নয়, বাস্তবেও ছিলেন বেলা বোস, চেনেন সেই সাহসিনীকে?
কিছুদিন আগেই উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। যিনি আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা, তাঁর লেখা, বলা ভালো তাঁর দর্শনের সঙ্গে কেন পড়ুয়াদের পরিচিত করানো হবে না, তা নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন।
এবার প্রায় একইরকম বিতর্ক দেখা দিল মহাশ্বেতা দেবীর লেখা বাদ পড়া নিয়েও। এতদিন দিল্লি ইউনিভার্সিটির ইংরেজির কোর্সে পড়ানো হত মহাশ্বেতা দেবীর ছোটগল্প ‘দ্রৌপদী’। যেখানে উঠে এসেছিল এক দলিত, প্রান্তিক মহিলার জীবন। অভিযোগ যে, রাতারাতি এক কমিটির সুপারিশে গল্পটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও তার সপক্ষে তেমন কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি যা যুক্তিসঙ্গত। এমনকী এর বিকল্প হিসেবে মহাশ্বেতা দেবীর অন্য কোনও গল্প রাখারও কোনও প্রস্তাব নেওয়া হয়নি।
আরও শুনুন: Operation Devi Shakti: মাতৃশক্তির বলে বলীয়ান হয়েই কাবুল থেকে বিপর্যস্তদের উদ্ধার ভারতীয় সেনার
অভিযোগ, সচেতন ভাবেই দলিতদের জীবনকে পড়ুয়াদের থেকে আড়াল করা হচ্ছে। প্রান্তিক জীবন মহাশ্বেতার কলমে জীবন্ত হয়ে থেকেছে বরাবর। ‘দ্রৌপদী’র মতো গল্প বাদ দেওয়া সেই ইঙ্গিত খানিকটা বহন করে। তবে তা আরও স্পষ্ট হয়, যখন ওই কমিটি সিলেবাস থেকে কয়েকজন দলিত লেখকের লেখাও বাদ দেওয়া হয়।
অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যরা এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করেছেন। এই ধরনের পরিবর্তন যে অযৌক্তিক, এরককমই মত তাঁদের। অভিযোগ, দলিত, মহিলা, সংখ্যালঘু এবং যৌনতার ক্ষেত্রে যাঁরা ব্যতিক্রমী বা সংখ্যালঘু- তাঁদের কথা যাতে পড়ুয়াদের গোচরে না আসে, তার জন্যই এরকম সচেতন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। একের পর এক পরিবর্তনে সেই অভিপ্রায় স্পষ্ট হচ্ছে বলেই অভিযোগ তাঁদের।
যদিও যে কমিটির সুপারিশে এই পরিবর্তন হয়েছে, তার চেয়ারম্যান এম কে পণ্ডিত একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি জাতিগত ভেদাভেদে বিশ্বাস করেন না। তাঁর দাবি, ভারতবাসী যে আলাদা আলাদা জাতিতে বিভক্ত এমনটা তিনি মনে করেন না। অর্থাৎ, জাতিগত কারণে যে এই লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, বেশ কিছু লেখা দীর্ঘদিন ধরে পড়ানো হচ্ছে। তাই এই পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে অন্যান্য লেখকদের লেখার সঙ্গেও পড়ুয়ারা পরিচিত হতে পারে।
যদিও মহাশ্বেতা দেবীর মতো বরেণ্য সাহিত্যিকের লেখা বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সেই সঙ্গে দলিত, প্রান্তিকদের কণ্ঠ যেখানে ধরা পড়েছে, একযোগে তা প্রত্যাখ্যান করা নিয়েও নানা মহলে অসন্তোষ থেকেই গিয়েছে।