জোর করে মহিলাদের ধর্ম পরিবর্তন করছেন জনৈক মুসলিম পুরুষ। এই মর্মে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যা সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল দিল্লি হাই কোর্ট। কিন্তু কেন আদালতের এমন পদক্ষেপ? আসুন শুনে নিই।
জোর করে এক মহিলার ধর্ম পরিবর্তন করা হয়ছে। যার নেপথ্যে রয়েছেন একজন মুসলিম ব্যক্তি। নেটদুনিয়ায় এমন খবর প্রায়শই দেখা যায়। সেরকমই এক খবরের ভিত্তিতে এবার বিশেষ পদক্ষেপ করল দিল্লি হাই কোর্ট। এই সংক্রান্ত এক মামলার নিরিখে, ওই ব্যক্তির নামে প্রকাশিত খবর নেটদুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ারই নির্দেশ দিল আদালত।
আরও শুনুন: ‘ভয় পেলেও লড়াই ছাড়িনি’, দশ বছর পর ধর্ষকদের শাস্তিতে প্রতিক্রিয়া নির্যাতিতার
ধর্ম পরিবর্তন ইস্যুতে বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তাল দেশের রাজনৈতিক মহল। যদিও এই উত্তাপ কোনও সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। দেশের একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যেই সিনেমাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যার প্রধান কারণ সিনেমাটির গল্প। সেখানে স্পষ্টভাবে ধর্ম পরিবর্তনের ঘটনা দেখানো হয়েছে। যা দেখার পর আতঙ্কে ভুগছেন অনেকেই। তবে সিনেমায় দেখানো সেইসব তথ্য আসলে সঠিক নয়, এমনটাও দাবি করেছেন অনেকেই। স্রেফ জাতিগত হিংসা ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই এমনটা করা হয়েছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের। এই আবহেই এল দিল্লি আদালতের রায়। তবে এই রায়ের নেপথ্যে রয়েছেন একজন মুসলিম ব্যক্তির অভিযোগ। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নামে আজমত আলি খান। পেশায় তিনি সংগীত-শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম পরিবর্তনে জোর করার অভিযোগ এনেছিলেন এক মহিলা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুনানি চলছিল আদালতে। অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যে ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িকতার ছোঁয়া লাগছে। হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানোর সহায়ক হচ্ছে এই ধরনের খবর।
এই নিরিখেই আদালতের পর্যবেক্ষণ যে, এই ঘটনায় প্রকাশিত খবর সরিয়ে নিতে হবে। কেননা এই খবরের প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে যে ধরনের মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে তা কাম্য নয়। আদালতের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, এই সংক্রান্ত কোনও খবর যেন নেটদুনিয়ায় প্রকাশ না পায়। আর কোনওভাবে তা প্রকাশিত হলেও যেন অবিলম্বে সেই লিঙ্ক ব্লক করে দেওয়া হয়। এই মর্মে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, নিউজ ব্রডকাস্টিং অ্যান্ড ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি সহ গুগল, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমের দপ্তরে নোটিশ পাঠিয়েছে আদালত। সেইসঙ্গে দিল্লির কিছু স্থানীয় সংবাদ অফিসেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আরও শুনুন: ‘আইসিস-এর কাজকে কেন সমর্থন?’, কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধকরণে প্রশ্ন অনুরাগ ঠাকুরের
যদিও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দেয়নি আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ মে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা বিচার করে দেখবে আদালত। সেইমতো নির্ধারিত হবে অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাগ্য। তবে, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগে, এই ঘটনাইয় প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরনের কথাবার্তা চলছিল, তা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই মত আদালতের। খবর সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশে সে কথাই স্পষ্ট হল। পাশাপাশি এই ধরনের খবর প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সংবাদমাধ্যমগুলির অবস্থান ঠিক কেমন হবে, সে প্রশ্নও উঠল আদালতের এই রায়ে।