পুজো-পার্বন কিংবা উৎসবে পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তো হামেশাই তোলেন। তবে এবার শিবের সঙ্গে সেলফি তোলার নিদান দিল খোদ মন্ত্রী। আর তাতেই নাকি ফিরবে রাজ্যে নারী-পুরুষ জন্মের অনুপাতে ভারসাম্য। এমনই নির্দেশই জারি হয়েছে সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে। যা শুনে কার্যত অবাক রাজ্যবাসী। সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। আর কী কী নির্দেশ জারি করলেন মন্ত্রী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাজ্যে নারী-পুরুষের জন্মহারে ভারসাম্য ফেরাতে করতে হবে পুজো। তবে শুধু পুজো করলেই যে ফল মিলবে হাতেনাতে তেমনটা কিন্তু নয়। তার জন্য শিবলিঙ্গের সঙ্গে সেলফি তোলাও নাকি বাধ্যতামূলক। এবার এমনই নিদান জারি হল উত্তরাখণ্ডে। আর সেই নির্দেশের নেপথ্যে রয়েছেন খোদ সে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী রেখা আর্য।
এই মর্মে রাজ্য জুড়ে জারি হয়েছে নির্দেশিকাও। রেখার এই আশ্চর্য মন্তব্যের পরেই শুরু হয়েছে হইচই। বিতর্কে উত্তাল রাজনীতি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া। সম্প্রতি নীতি আয়োগের একটি রিপোর্ট জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডে পুত্র ও কন্যাসন্তান জন্মের অনুপাতে মোটেও ভারসাম্য নেই। দেশে প্রতি ১ হাজার জন্য পুত্র জন্মালে, কন্যা জন্মায় ৮৯৯ জন। সেখানে উত্তরাখণ্ডে মেয়ে জন্মানোর অনুপাত বেশ খানিকটা কম বলেই দাবি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ওই রিপোর্টে।
আরও শুনুন: দ্রৌপদী নাম হয়েছিল স্কুলে, নিজের ‘আসল’ নাম জানালেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি
আর সেই অনুপাত বাড়াতে প্রচার, সচেতনতা বৃদ্ধির মতো কোনও পদক্ষেপ নয়। বরং শিবলিঙ্গের সঙ্গে সেলফি তোলার সমাধান বাতলেছেন সে রাজ্যের মন্ত্রী। কানওয়ার যাত্রার শেষ দিন তথা ২৬ জুলাই শিবলিঙ্গের জলাভিষেকের পরে পুজো শেষ করে শিবের সঙ্গে সেলফি তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দপ্তরের সমস্ত কর্মীদের। শুধু সেলফি তুললেই হবে না, সেই ছবি পাঠাতেও হবে দপ্তরের মেল অ্যাড্রেসে। পাাশাপাশি জেলা আধিকারিকদের হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠাতে হবে সেই ছবি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন কেন্দ্রের ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পে গতি আনা সম্ভব হবে, তেমনই ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এও অংশ নেওয়া যাবে বলেই দাবি ওই মন্ত্রীর।
শুধু সেলফি তোলার নিদানই নয়, হরিদ্বার থেকে হৃষিকেশ, ওই ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ধরে ‘গ্র্যান্ড কানোয়ার যাত্রা’-রও আয়োজন করেছেন মন্ত্রী। যেখানে সমস্ত দপ্তরের সব কর্মীদের যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে আমলা, অঙ্গনওয়ারি কর্মী থেকে শুরু করে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবী কর্মী- সকলকেই ওই যাত্রায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই যাত্রার শেষ বিন্দুতে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। হৃষিকেশের ১৩০০ বছরের পুরনো বীরভদ্র মন্দিরে জলাভিষেক করবেন তিনি।
আরও শুনুন: নাবালিকা ‘স্ত্রী’-র সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ধর্ষণেরই শামিল, রায় দিল্লি হাইকোর্টের
তবে মন্ত্রীর সেলফি-নিদানের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। মন্ত্রীর এই যুক্তিবুদ্ধিহীন নির্দেশ কীভাবে নারী-পুরুষ জন্মের হারে ভারসাম্য আনবে, তার ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি বিরোধী দল কংগ্রেস। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের ধর্ম সংক্রান্ত নির্দেশিকা না-দিয়ে নারীদের উপর বেড়ে চলা অপরাধ দমনের চেষ্টা করলে বরং বেশি উপকার পেত উত্তরাখণ্ড। বিরোধীদের সমালোচনার মুখে মন্ত্রীর অবশ্য সাফাই, কারওকে জোর করে কিছু করতে বলা হয়নি। তাছাড়া তিনি নির্দেশিকা দিয়েছেন ঠিক কথা, তবে কেউ তা পালন না-করলে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও রকম পদক্ষেপ বা শাস্তির কথা মোটেও ঘোষণা করেননি তিনি । মন্ত্রীর এমন অদ্ভুত নির্দেশিকার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন সে রাজ্যের বহু সরকারি কর্মীও।