বাতাসে যেন ভাসছে বিদ্বেষ-বিষ। কান পাতলেই ধর্মীয় অশান্তির খবর। তার মধ্যেই এবার খাদ্যাভাস নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ল পুলিশ। চাইতে হল ক্ষমাও। কোথায় ঘটল এই ঘটনা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হজরত মহম্মদ বিতর্কে দিন কয়েক ধরেই উত্তাল দেশ। বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়িয়েছিল দেশের আনাচে কানাচে। রাজস্থানের উদয়পুর ও মহারাষ্ট্রের অমরাবতীর ঘটনা সেই আগুনে ঘি ঢালে যেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নূপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দেওয়ায় প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। এরই মধ্যে আবার নতুন করে দানা বেঁধেছে ‘কালী’ তথ্য়চিত্রের পোস্টার বিতর্ক। সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষ ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা হাওয়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসনও। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টের উপর নজর রাখছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও রকম কথাবার্তা, ছবি এমনকী পোস্টও যে ফের অশান্তির আবহকে উস্কে দিতে পারে, তার মাথায় রেখেই বাড়তি সতর্ক পুলিশ।
আরও শুনুন: রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ, গ্রেপ্তার পাঞ্জাবি অভিনেতা
তবে সেই বাড়তি সতর্কতা যে বুমেরাং হয়ে যাবে, তা বোধহয় আঁচ করতে পারেনি পুলিশ। খাবারদাবারের ছবি তো আমরা অনেকেই শেয়ার করতে পছন্দ করি সোশ্য়াল মিডিয়ায়। আর সেই কাজটিই করেছিলেন আবু বাকার নামে চেন্নাইয়ের এক বাসিন্দা। তিনি আবার স্থানীয় কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ পদের ছবি পোস্ট করেন তিনি। সেই ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন ‘বিফ কারি’।
তবে তাঁর সেই পোস্টটি ভাল ভাবে নেয়নি পুলিশ। পরের দিনই গ্রেটার চেন্নাই পুলিশের তরফে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর এই পোস্টটি যথাযথ নয়, এবং এ ধরনের পোস্ট ভবিষ্যতে এড়িয়ে যাওয়া উচিত বলেও জানানো হয় পুলিশের তরফে।
তবে পুলিশের এই পাল্টা টুইটটিকে মোটেও ভাল চোখে নেননি নেটিজেনরা। বরং পুলিশের পদক্ষেপ নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। কার্যত আবু বাকারের পাশে দাঁড়িয়েই নেট নাগরিকদের সওয়াল, কিসের ভিত্তিতে পুলিশ এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে? ডিএমকে সাংসদ ড. সেন্থিলকুমার পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। আবু বাকারের পোস্টে কোনও ভুল ছিল না বলেই দাবি করেন তিনি।
তামিলনাড়ুর মতো বেশ কয়েকটি দক্ষিণের রাজ্যেই গোমাংস খাওয়া বেআইনি নয়। জনসংখ্যার বহু মানুষই এই খাবারটি খেতে অভ্যস্ত। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে গ্রেটার চেন্নাই পুলিশ। শেষ পর্যন্ত টুইটারে ক্ষমা চেয়ে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, কারওর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মন্তব্য করার অভিপ্রায় ছিল না তাদের।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
গোমাংস নিয়ে এর আগে কম অশান্তি প্রত্যক্ষ করেনি দেশ। বেশ কয়েক বছর আগে গোমাংস রাখার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। গত মে মাসেই গোমাংসে আপত্তি জানিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন তামিলনাড়ুর তিরুপুত্তার জেলার ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। অম্বুর বিরিয়ানি উৎসবে বিফ ও পর্ক পদ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি বহু দলিত সম্প্রদায়ই। বৈষম্যের অভিযোগে ওই কালেক্টরের হাতে শো-কজ নোটিস ধরায় রাজ্যের তফসিলি জাতি, উপজাতি (SC-ST) কমিশন। তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় খাবারের ছবিকে কেন্দ্র করে পুলিশের এই মন্তব্যে ফের উসকে উঠেছে বিতর্কের আঁচ।