মুসলিম আক্রমণের সামনেও সাহসী লড়াই লড়েছিলেন রাজা হিমু। দিল্লির মসনদে শেষ হিন্দু রাজা ছিলেন তিনিই। আর তাঁর বীরত্বকে স্মরণীয় করে রাখতেই এবার জোড়া স্মারক গড়ার ঘোষণা বিজেপির। শুনে নেওয়া যাক।
হিন্দুদের অতীত গৌরবের কথা তুলে ধরতে সবসময় তৎপর গেরুয়া শিবির। তাই দেশের হিন্দু বীরদের কৃতিত্ব, তাঁদের অবদান- এসব নিয়ে বারে বারেই কথা বলতে শোনা যায় বিজেপি নেতৃত্বকে। এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন রাজা হিমু। ষোল শতকের এই রাজাকেই শেষ হিন্দু সম্রাট হিসেবে পেয়েছিল দিল্লি। মুঘল সেনা যখন ভারতে এসে আক্রমণ শানায়, তখন তাঁদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজা হিমু। এমনকি লড়াইয়ে তাদের হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই হিন্দু বীরকে শ্রদ্ধা জানাতেই এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল হরিয়ানার বিজেপি সরকার। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, রাজা হিমুর নামে দুটি স্মারক গড়া হবে সেখানে। নতুন প্রজন্মকে হিমুর সাহস ও বীরত্বের কথা মনে করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খট্টর।
আরও শুনুন: ফের কাঠগড়ায় ‘ঠোক দো’ নীতি, যোগীরাজ্যে ১৮৩ মৃত্যু নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের মামলা
ভারতের ইতিহাস জানায়, হিমু জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন, তবে বংশপরম্পরায় রাজত্ব পাননি তিনি। রাজার অধিকার তিনি অর্জন করেছিলেন বীরত্বের নিশান হিসেবেই। আসলে আফগান শাসক আদিল শাহ সুরির মুখ্য সেনাপতি ছিলেন হিমু। তবে কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই নয়, রাজসভার মন্ত্রণাগৃহেও নিজের গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন তিনি। সেসময়ে উত্তর ভারতে ক্ষমতা দখলের জন্য আফগানদের সঙ্গে লড়াই জুড়েছে মুঘলরা। এই সময়েই মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দেন অকুতোভয় হিমু। এমনকি ১৫৫৬ সালের ৭ অক্টোবর দিল্লির যুদ্ধে আকবরের মুঘল বাহিনীকে পরাজিত করেন তিনি। আর এরপরই হিমুর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। মুঘলদের হারানোর পর তিনিই দিল্লির সিংহাসন দখল করেন। বীর হিন্দু সম্রাট বিক্রমাদিত্যের উপাধি ধারণ করেই তিনি রাজা হয়ে বসেন। যদিও রাজসুখ তাঁর ভাগ্যে বেশিদিন সয়নি। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধেই আকবরের বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে নিহত হন হিমু। কিন্তু হিন্দু রাজাদের তালিকায় দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা হিসেবে তাঁর নাম না করে উপায় নেই। আর এই হিন্দু বীরকেই এবার সম্মান জানাতে চায় গেরুয়া শিবির।
আরও শুনুন: ‘ইন্ডিয়া নামে আপত্তি, হিন্দুতে নয়?’ দুই শব্দের উৎস বুঝিয়েই গেরুয়া শিবিরকে একহাত থারুরের
খট্টর জানিয়েছেন, মহাপুরুষদের জন্মদিন উদযাপনের জন্য যে ‘সন্ত মহাপুরুষ সম্মান এবং বিচার প্রচার প্রসার যোজনা’ প্রকল্প নিয়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার, সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই হিমুর স্মারক গড়া হবে। একটি স্মারক বসবে পানিপথে, একটি রেওয়ারিতে। একইসঙ্গে হিমুর নামে একটি ডাকটিকিটও প্রকাশ করা হয়েছে। মুঘলদের হারানোর পর রাজা হিসেবে হিমুর অভিষেককে স্মরণ করতেই এই উদ্যোগ নিচ্ছে হরিয়ানা সরকার, এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। তবে এই উদ্যোগকে গেরুয়া শিবিরের হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।