ছোট থেকেই সে শিকার অটিজমের। কথা বলাও বেশ অসুবিধার তার জন্য। তবে জলে নামলেই কথা বলে ওঠে তাঁর হাত-পা-শরীর। তখন কোনও বাধাই আর বাধা নয় যেন। সমস্ত শারীরিক প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে সাঁতরে পেরিয়ে ফেলে মস্ত সমুদ্র। সম্প্রতি ফের রেকর্ড গড়েছে ত্রয়োদশী এই কন্যা। বঙ্গোপসাগর পেরিয়েছে সে মাত্র ১৩ ঘণ্টায়। শুনব সেই খুদের গল্পই।
‘বরফি’ সিনেমার সেই ঝিলমিল চরিত্রটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। যে চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। সিনেমায় ঝিলমিল চরিত্রটি ছিল অটিজমের শিকার। কিংবা ধরুন ‘তারে জমিন পর’ ছবির সেই বাচ্চাটির কথা। যে ডিজলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এমন বহু বলিউড, টলিউড ছবি জুড়েই জায়গা করে নিয়েছে শিশুদের এমন সব অসুখ বা অসুবিধার কথা।
তবে এ বিষয়ে যে এখনও সমাজ খুব সাবালক হয়েছে, তা কিন্তু নয়। বরং সচেতনতার অভাব রয়েছে বহু স্তরেই। বহু ক্ষেত্রেই এই স্নায়ুঘটিত অসুস্থতাটিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা অন্য কিছু বলে মোটা দাগে দেগে দেওয়া হয়। এই ধরনের সমস্যাযুক্ত শিশুদের যে ধরনের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দরকার, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থেকে যায় অধরা। ফলে অনেক অভিভাবকের ক্ষেত্রেই লড়াইটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তবু এ সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে গড়ে ফেলা যায় নতুন নতুন রেকর্ড, তা প্রমাণ করে দিয়েছে ভারতীয় প্যারাসুইমার জিয়া। মুম্বইয়ের মেয়ে জিয়ার বয়স সবে ১৩। আর ওই বয়সেই সে গড়ে ফেলেছে বিশ্ব রেকর্ড। সাঁতরে পার করে ফেলেছে প্রতিকূলতায় ভরা বঙ্গোপসাগরে। শ্রীলঙ্কার থালাউমান্নার থেকে তামিলনাড়ুর ধনুশকোড়ি পর্যন্ত সাঁতার কেটে বাকজালা জংশন পেরিয়েছে সে মাত্র ১৩ ঘণ্টায়।
আরও শুনুন: ডিঙিয়েছেন বাধার পাহাড়, নিষিদ্ধপল্লী কামাথিপুরা থেকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি এই ভারতকন্যার
বাবা মদন রাই নৌসেনার অফিসার। জিয়ার যখন মাত্র ২ বছর বয়স, অটিজমের সমস্যা ধরা পড়ে তার। কথা বলার ক্ষেত্রেও অসুবিধা রয়েছে জিয়ার। চিকিৎসকের পরামর্শেই সাঁতার শেখা শুরু। আর সেটাই পরে হয়ে উঠল জীবনের অঙ্গ। এর আগেও ১৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে খোলা জলে সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল জিয়া। আর এবার ফের নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলল সে।
রবিবার বিকেল পাঁচটা পঁচিশ নাগাদ রামেশ্বরমের অরিচলমুনাই সৈকতে পৌঁছয় জিয়া। সেখানে তাঁকে স্বাগত জাানান তামিলনাড়ুর ডিজিপি শৈলেন্দ বাবু। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক। ডিজিপি শৈলেন্দ্র নিজেই এককালে সাঁতারু ছিলেন। কিছু দিন আগে ওই সমুদ্রপথটি সাঁতরে পার করেছিলেন শৈলেন্দ্র আর তাঁর দলবল। ফলে তিনি ভালই জানেন, মোটেও সহজ ছিল না জিয়ার এই সফর। কারণ ওই সমুদ্রে রয়েছে মিল্ক শার্ক নামে একধরনের ভয়ঙ্কর মাছের বসবাস। এছাড়া রয়েছে জেলিফিশের উৎপাতও। ফলে রাতের থেকেও দিনে সাঁতার কাটা এ জলে বেশ কঠিন।
জিয়ার বাবা জানিয়েছেন, প্রথম তিন ঘণ্টা বেশ কঠিন ছিল জিয়ার জন্য। তবে জিয়া যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে মাত্র ১৩ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগর পেরিয়েছে তা তাঁর জন্য বিরাট সাফল্যের।
আরও শুনুন: ইচ্ছাশক্তিতেই আসে সাফল্য, দেশবাসীকে প্রেরণা জোগায় এভারেস্ট জয়ী শিবাঙ্গীর গল্প
গত বছর বান্দ্রা-ওরলি সি-লিঙ্ক থেকে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া পর্যন্ত সাঁতার কেটেছিল সে মাত্র ৮ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে। তার জন্য এ বছর প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরষ্কারও পায় জিয়া। অটিজমের শিকার সমস্ত বাচ্চাদের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা নেভি চিলড্রেন স্কুলের পড়ুয়া জিয়া। আর এ ভাবেই সচেতনতা ছড়াতে চায় সে। আসলে মনের জোর আর ইচ্ছা থাকলে কোনও ধরনের শারীরিক প্রতিকূলতাই যে কোনও বাধা নয়, তাই আরেক বার প্রমাণ করে দিয়েছে এই খুদে কন্যাটি।