রাতবিরেতে লাউডস্পিকারে ডিজে গান। আর তাকে কেন্দ্র করেই দিনকয়েক আগেই রণক্ষেত্রের আকার নিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের জিরাপুর। দলিত বিয়ের মিছেলে পাথর ছোঁড়ারও অভিযোগ উঠল মুসলিম বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারিও হল। তবে তাতেও ক্ষান্ত হল না স্থানীয় প্রশাসন। শাস্তি স্বরূপ বুলডোজার এনে গুড়িয়ে দেওয়া হল অভিযুক্তদের বাড়ি-সহ মোট ৪৮টি বাড়ি। প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে স্বৈরাচারের গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? আসুন, শুনে নিই।
ইদানীং কান পাতলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর। দিন কয়েক আগেই হিংসা ছড়িয়েছিল মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান-সহ একাধিক রাজ্যে। তার উপর হিন্দুত্ববাদী হাওয়ায় কাঁপছে দেশ। মন্দির-মসজিদ বিতর্ককে কেন্দ্র করেও উত্তাপ ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন কোণায়। না, শুধু সাম্প্রদায়িক হানাহানিই নয়, এ দেশে দলিত নিগ্রহের ঘটনাও নতুন বিষয় নয়। প্রায়শই দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দলিত নিগ্রহের ঘটনা কানে আসে।
আরও শুনুন: জ্ঞানবাপী-বিতর্কে ওয়াইসিকে তোপ মালব্যের, মসজিদে রয়েছে আরও দেবদেবীর মূর্তি, দাবি অজয় মিশ্রের
দিন দুয়েক আগে মধ্যপ্রদেশের রাজগড় জেলার জিরাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকা সাক্ষী ছিল আরও এক অশান্তির। এলাকার একটি দলিত পরিবারের বিয়ে উপলক্ষে শোভাযাত্রা যাচ্ছিল মন্দিরের দিকে। বিয়ে উপলক্ষে ব্যবস্থা করা হয়েছিল ডিজে গানবাজনারও। রাতের দিকে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার অধিবাসীরা লাউডস্পিকারে আপত্তি জানান। তবে সেই বাগবিতন্ডা হাতাহাতির জায়গায় পৌঁছতে সময় লাগেনি। অভিযোগ, সেসময় দলিত মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে কয়েকজন স্থানীয়। তাতে একটি শিশু-সহ অন্তত পাঁচ জন জখম হয়।
স্থানীয়দের দাবি, প্রথমে আপত্তি শুনে গান বন্ধ করে দিলেও মন্দিরে পৌঁছেই ফের গান বাজানো শুরু করেন তাঁরা। সেসময় পিছন দিক থেকে কয়েকজন দিয়ে পাথর ছোঁড়া শুরু করেন বলেই জানান জিরাপুর থানার স্টেশন ইন চার্জ প্রভাত গৌড়। এর পরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন কনের বাবা। যার ভিত্তিতে ৬ জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয় আরও ২১ জনের বিরুদ্ধেও। তফশিলি আইন-সহ ভারতীয় সংবিধানের বেশ কয়েকটি ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ।
তবে এর পরে স্থানীয় প্রশাসন যা ব্যবস্থা নিয়েছেন তা কার্যত অমানবিক ও অসংবিধানিক বলেই তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। গত দুদিনে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৪৮টি বাড়ি। তার মধ্যে ১৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি ঘর। ওই ১৮টি বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ কেউ ওইদিন পাথর ছোঁড়ায় ঘটনায় জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বাকি ৩০টি বাড়ি মন্দিরের পথে বেআইনি ভাবে তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, এর আগেও ওই তিরিশটি বাড়িতে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ নোটিসটি পৌঁছয় এক দিন আগে। তবে পরের দিন আলো না ফুটতে না ফুটতেই বুলডোজার এনে সেসব বাড়ি গুড়িয়ে দেয় প্রশাসন।
আরও শুনুন: জ্ঞানবাপীর আঁচ কর্ণাটকেও, মসজিদের ভিতরে হনুমান উপাসনার আরজি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের
স্থানীয় অশান্তির ঘটনায় জিরাপুরের ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য যে শাস্তির পথ বেছে নিয়েছে প্রশাসন, তা ভয়ঙ্কর বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। সূত্রের খবর, ওই এলাকাটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা বলেই পরিচিত। তবে এমন ঘটনা বোধহয় মধ্যপ্রদেশে নতুন নয়। রামনবমীর সময়ে খারগোনে হিংসার ঘটনাতেও অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজার এনে গুড়িয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছিলেন শিবরাজ সিংহ সরকার। সে নিয়ে বিপুল সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে তাতেও যে নিজেদের সেই অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরেনি মধ্যপ্রদেশ প্রশাসন, তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল জিরাপুরের এই ঘটনায়।