জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে বিতর্কের জল গড়াল আরও দূর। মসজিদের ভিতরে সমীক্ষা ও ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিয়ে বারাণসীর একটি আদালত। শুক্রবার মোটের উপর নির্বিঘ্নেই মিটেছে সেই কাজ। তবে আদালতের সেই সিদ্ধান্তের এবার কড়া নিন্দা করলেন AIMIM নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এর ফলে মুসলিমদের প্রতি হিংসার ঘটনা বাড়বে বলেও দাবি ওয়াইসির। কেন এমন বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শৃঙ্গার গৌরীর মন্দিরের একটি অংশ দখল করে তৈরি হয়েছে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ। এমনই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে একটি পক্ষ। সেই মামলার শুনানিতে মসজিদের ভিতরে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্বাবধানেই হবে সেই সমীক্ষা। গোটা প্রক্রিয়ার করতে হবে ভিডিওগ্রাফিও। এমনই নির্দেশ দিয়েছিল বারাণসীর সিভিল আদালত।
প্রাথমিক ভাবে সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আঞ্জুমান-ই-আন্ত্রাজিয়া কমিটি। তবে শেষপর্যন্ত কড়া নিরাপত্তার ওই সমীক্ষার কাজ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে শুক্রবার।
এ বার সেই ব্যাপারটি নিয়েই টুইটারে তোপ দাগলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এদিন আদালতের সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করে ওয়াইসি বলেন, জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত আদতে সংবিধানবিরোধী। তাঁর বক্তব্য, ১৯৯১সালের ‘প্লেস অব ওয়ারশিপ’ আইনকে লঙ্ঘন করেছে বারাণসীর ওই আদালত। অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন ভারতীয় রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষার পক্ষে। আর বারাণসী আদালতের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে তার পরিপন্থী বলেই মনে করেন ওয়াইসি।
আরও শুনুন: ভিডিও-সমীক্ষায় ঘোর আপত্তি মসজিদ কমিটির, জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে এবার আসরে বিশ্বহিন্দু পরিষদ
জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে এই রেষারেষি অবশ্য আজকের নয়। মুঘল আমলে কাশী বিশ্বেশ্বর মন্দিরের একটি অংশ ভেঙে নাকি এই মন্দির তৈরি করেছিলেন স্বয়ং ঔরঙ্গজেব। আজ যেখানে ওই জ্ঞানবাপী মসজিদ, সেখানে নাকি একদিন ছিল শৃঙ্গার গৌরীর প্রার্থনাস্থল। এমনই দাবি করে বিশ্বনাথের ওই জায়গা ফেরৎ চেয়েছেন মামলাকারীরা। তবে এতদিন দিব্যি পাশাপাশিই ছিল এই মন্দির ও মসজিদ। মন্দিরের ট্রাস্ট ও মসজিদ পরিচালন কমিটির মধ্যেও এ সংক্রান্ত কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না এতদিন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশ্বনাথ করিডর গড়ার উদ্যোগেও জমি দান করেছিল মসজিদ কমিটি।
তবে গোল বাঁধে আদালতের সমীক্ষার ওই নির্দেশ আসার পরেই। আদালতের এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা করে ওয়াইসির বক্তব্য, আদালতের এই সিদ্ধান্ত আসলে মুসলিমদের প্রতি হিংসার পথকেই আরও প্রশস্ত করছে।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
গতকাল সমীক্ষাকে কেন্দ্র করে গোড়া থেকেই নিরাপত্তা বাড়িয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। মসজিদের ভিতরে সমীক্ষা ও ভিডিওগ্রাফিকে কেন্দ্র করে বাঁধতে পারে অশান্তি, এমন আঁচ পেয়ে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করে পুলিশ। সেই বজ্রআটুনির মধ্যেই আইনজীবীদের দল ঢোকে মসজিদের অন্দরে। তবে তেমন কোনও বড়সড় অশান্তির ঘটনা ঘটেনি বলেই জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
এই জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্কের মধ্যেই আগামী ১৯ মে কৃষ্ণ জন্মভূমি-ইদগাহ মসজিদ মামলার রায় দিতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের আদালত। সেই রায় ঘিরেও বড়সড় অশান্তির মেঘ ঘনাতে পারে বলে আশঙ্কা উত্তরপ্রদেশ পুলিশের। ওই দুটি ধর্মস্থানে ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।