কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে বিক্ষোভের আগুনে ফুটছে দেশ। প্রাক্তন ‘অগ্নিবীর’-দের নিজের সংস্থায় চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা খোদ। আর তাতেই বাড়ল বিপাক। সোশ্যাল মিডিয়ায় একযোগে তাঁর প্রতি আক্রমণ শানালেন প্রাক্তন জওয়ান ও সেনাকর্মীরা। ছুঁড়ে দিলের অস্বস্তিকর প্রশ্ন। আর সেই ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের উসকে উঠল ‘অগ্নিপথ’ বিতর্ক। কী এমন বললেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা? কী-ই বা তাঁদের অভিযোগ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখাতেও এবার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগের পথেই এগোতে চাইছে কেন্দ্র। আনা হয়েছে নতুন প্রকল্পও। কেন্দ্রীয় সরকারের সেই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরোধিতাতে গোড়া থেকেই উত্তাল দেশ। রেলপথ, সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন জায়গায় চলেছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ব্যাহত রেলপরিষেবা। এখনও পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে তার পরেও নয়া নীতি নিয়ে অটল সরকার। যদিও সেনাবাহিনীর স্থায়ী চাকরির ক্ষেত্রে প্রাক্তন ‘অগ্নিবীর’-দের প্রাধান্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানানো হয়েছে সংরক্ষণের কথাও। তবে তাতেও বিক্ষোভের আঁচ কমেনি। ‘অগ্নিপথ’ ইস্যুতে এখনও ফুটছে দেশ।
এসবের মধ্যেই নতুন আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন দেশের অন্যতম শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দা। জানিয়েছিলেন, ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় চার বছর চাকরির পরে কর্পোরেট চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন অগ্নিবীরেরা। টুইটারে এ নিয়ে একটি পোস্টও করেন তিনি। সেই পোস্টের তলায় অনেকেই এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। তাঁর সংস্থায় ঠিক কী ধরনের পদে বহাল হতে চলেছেন অগ্নিবীরেরা, এ নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন অনেকেই।
আরও শুনুন: ‘ভোটের বদলে বাম্পার সেল চালু করলেই হয়’, মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে সরব স্বরা ভাস্কর
আর সেই টুইটের প্রেক্ষিতেই এবার বিপাকে পড়লেন শিল্পপতি। উঠল প্রশ্নও। একই সঙ্গে সামনে এল পরভিন কুমার তেওটিয়া নামে এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর জীবনযুদ্ধের গল্প। ২৬/১১ মুম্বই হামলার সময়ে তাজ হোটেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বাঁচিয়েছেন অসংখ্য মানুষের প্রাণ। এত বড় দায়িত্বে থাকা সেই মানুষটিই গত ১৫ বছর ধরে কর্মহীন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত কোনও উপযুক্ত কাজের সন্ধান পাননি তিনি। আনন্দ মাহিন্দার কাছে তাঁর প্রশ্ন, এতদিনে কেন তাঁকে কোনও চাকরি দেননি শিল্পপতি? শুধু পরভিনই নন, তাঁর মতো অবসরপ্রাপ্ত বহু সেনাকর্মীরই একই দশা বলে দাবি করেন তিনি।
প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান অরুণ প্রকাশেরও একই প্রশ্ন শিল্পপতির কাছে। অরুণের জিজ্ঞাসা, কেন নতুন প্রকল্পের জন্য অপেক্ষা করছেন আনন্দ মাহিন্দ্রা? অসংখ্য সেনা জওয়ান ও অফিসার ব়্যাঙ্কের কর্মীরা অবসর নিচ্ছেন প্রতিবছর। তাঁদের জন্য এতদিনে কেন চাকরির ব্যবস্থা করেনি মাহিন্দ্রা গ্রুপ। পাশাপাশি ওই সংস্থার নিয়োগের পরিসংখ্যানও দাবি করে বসেছেন তিনি। তবে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি শিল্পপতি।
আরও শুনুন: হুইলচেয়ারে বসেই খাবার ডেলিভারি, যুবকের ইচ্ছাশক্তির জোরে অবাক নেটিজেনরা
প্রাক্তন দুই সেনাকর্মীর এই সওয়ালের পরে স্বাভাবিক ভাবেই ফের উসকে উঠেছে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন। সরকারের এই নতুন প্রকল্প অনুযায়ী, চুক্তিভিত্তিক এই কাজের মেয়াদ চার বছরের। এই কাজে না থাকবে কোনও পেনশন, না পরবর্তীতে কোনও কাজের নিশ্চয়তা। চার বছর পরে তার মধ্যে থেকে ২৫ শতাংশ কর্মীকে নিয়মিত সেনার কাজে নিয়োগ করলেও করতে পারে সরকার। যারা ১৫ বছর পর্যন্ত দেশকে সেবা করতে পারবেন। বাকি ৭৫ শতাংশের হাতে এককালীন টাকা তুলে দিয়েই হাত ধুতে চাইছে সরকার। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্পে খুশি নয় তরুণ প্রজন্ম। এই নীতি জনবিরোধী বলে দাবি করে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলো। এই পরিস্থিতিতে আনন্দ মাহিন্দ্রার কর্পোরেট কাজের প্রস্তাব যেন আগুনে ঘি ঢেলেছে। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পরভিন কিংবা অরুণের মতো বহু প্রাক্তন সেনাকর্মীরাই। ব্যাপারটি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটনাগরিকদের একাংশও।