করোনা-অতিমারির দাপটে আমরা হারিয়ে ফেলেছি জীবনের দু-দুটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ক্রমশ ভয় পেরিয়ে স্বাভাবিকতায় ফিরছে জীবন। এরই মধ্যে বারবার মিউটেশন করে করে নানা রূপে নানা ভাবে ফিরে আসছে কোভিড-১৯। এ বার চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকেই ছড়িয়েছে আতঙ্ক। কাদের কাদের সম্ভাবনা বেশি নতুন করে করোনা সংক্রমণের? কারাই বা একটু বেশি নিশ্চিন্ত, রক্তের গ্রুপ দেখেই বলে দিচ্ছেন একদল গবেষকেরা। আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে, শুনে নিন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় হানা দিয়েছে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ইতিমধ্যেই ওমিক্রন স্পাইক প্রোটিনের অন্তত ৩০টি মিউটেশন ঘটে গেছে। এই ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর, তা নিয়ে এখনও জল মাপছেন চিকিৎসক-গবেষকেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য আগেই একে বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্ট বলে দেগে দিয়েছে। দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে কড়াকড়ি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত বিমানযাত্রীদের উপর বসেছে কড়া প্রহরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও নেদারল্যান্ডস. ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ায় মিলেছে এই ভাইরাসের হদিস। ফলে শিগগিরই কি ভারতে আছড়ে পড়তে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ? উদ্বেগে স্বাস্থ্যমহল।
আরও শুনুন: করোনার মারণক্ষমতা কমলে কতটা স্বস্তি পাবে সাধারণ মানুষ? চিকিৎসক বলছেন…
করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। আক্রান্ত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। আসন্ন ঢেউয়ে কাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, তা এ নাকি বার রক্তের গ্রুপ দেখেই বলে দিতে পারেন একদল বিজ্ঞানী। সম্প্রতি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের একদল চিকিৎসক এমনই একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। সেলুলার ও ইনফেকশন মাইক্রোবায়োলজির একটি জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে সেই গবেষণা।
কী বলছেন তাঁরা?
তাঁদের এই গবেষণা অনুযায়ী, O, AB এবং আরএইচ নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ যাঁদের, তাঁদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। A , B এবং আরএইচ পজেটিভ-দের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ হওয়ার আশঙ্কা বেশ কিছুটা হলেও কিন্তু বেশি।
গবেষকেরা এ-ও জানিয়েছেন যে, B গ্রপের রক্ত যাঁদের, তাঁদের মধ্যে মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমিত হবেন ওই গ্রুপের পুরুষেরা। তেমনই যাঁদের বয়স বছর ষাটের নীচে এবং যাঁদের রক্তের গ্রুপ AB, তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।
স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ড. রেশমি রানা জানিয়েছেন, তেমন ভাবে কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত না মিললেও তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ বেশি ভাল ভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছেন AB, O রক্তের গ্রুপের লোকেরা। তাঁদের সেরে ওঠার হারও ছিল বেশি। উল্টোদিকে, A , B এবং আরএইচ পজেটিভদের সেই হার ছিল কম। অবশ্য সে সব ক্ষেত্রে কো-মর্বিডিটিও একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।
আরও শুনুন: Covid : বাচ্চারা কি সারাক্ষণ Mask পরবে! করোনাকালে ছোটদের সুরক্ষায় কী করবেন?
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ওই বছরেরই অক্টোবর পর্যন্ত স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে আড়াই হাজারেরও বেশি কোভিড রোগী ভর্তি হন। যাদের মধ্যে A গ্রুপের রক্ত বহনকারী ছিলেন ২৯.৯৩ %, B গ্রুপের রক্ত রয়েছে এমন রোগী ছিলেন ৪১.৮০ %, O গ্রুপের ছিলেন ২১.১৯ % এবং AB ছিলেন ৭.৯৮ %। আর তাঁদের মধ্যে ৯৮.০৭ % রোগীই ছিলেন আরএইচ পজেটিভ।
ফলে মোটামুটি দেখা গিয়েছে, A এবং B গ্রুপের রক্তবাহীদের সঙ্গে কোভিডের একটা সম্পর্ক ছিলই। এ বার তা সত্যিই কতটা যথাযথ, তা খতিয়ে দেখছে গবেষকদের দলটি।