কোথাও মন্দির-মসজিদ বিতর্ক তো কোথাও ধর্মস্থানে লাউডস্পিকারে আপত্তি, সব মিলিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের শেষ নেই এই মুহূর্তে। মসজিদে আজানের সময় লাউডস্পিকার ব্যবহারের বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হনুমান চালিশা পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এর মধ্যেই আবার হিন্দুত্ববাদী নেতা সাভারকরের ছবি দিয়ে অন্দরসজ্জা করে বিতর্ক বাড়াল কেরলের একটি মন্দির।
মন্দিরের অন্দরসজ্জায় হিন্দুত্ববাদী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ছবি ব্যবহার করে বিপাকে কেরলের একটি মন্দির। পরমেক্কাভু দেবস্বম নামে ওই মন্দিরটিতে ত্রিশূর পুরম উপলক্ষে সাজসজ্জা চলছিল। সেই সজ্জাতেই নাকি ব্যাবহার করা হয়েছিল সাভারকারের ছবিটি। আর ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
কেরলের একটি বিখ্যাত উৎসব পুরম। গ্রীষ্মকালীন ফসল কাটার পরে কোনও একটি দুর্গা বা কালী মন্দিরে পালন করা হয় এই উৎসব। পুরম উপলক্ষে মন্দির থেকে বেরোয় একটি শোভাযাত্রাও, যার পুরভাগে থাকে সাজসজ্জা করা একটি হাতি। সেই শোভাযাত্রা উপলক্ষে সাজানো একটি ছাতাতেই সাভারকরের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
আরও শুনুন: ধর্মীয় প্রথা বন্ধের প্রতিবাদ করে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা, মোদির সাক্ষাৎপ্রার্থী তামিলনাড়ুর পুরোহিত
আর তা নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কংগ্রেস। ব্যাপারটিকে সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচীর একটি বলেই তোপ দেগেছেন কংগ্রেস নেতা পদ্মজা বেণুগোপাল। তাঁর কথায়, ত্রিশুর পুরম কোনও বিশেষ ধর্ম, জাতি বা রাজনৈতিক ভাবনার উৎসব নয়। এত বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির উদযাপন হিসেবেই পালিত হয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠান। আর সেই মিলনের সুরটিকে নষ্ট করতেই উঠেপড়ে লেগেছে সঙ্ঘ পরিবার। ব্যাপারটি নিয়ে কেরলে ক্ষমতায় থাকা বামেদের উপরেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, কেরলে ক্ষমতায় রয়েছে বামেরা। ত্রিশুরের বিধায়কও বাম দলের। এমনকি সেখানকার কর্পোরেশনও বামেদেরই দখলে। ফলে সাভারকারের ছবি লাগানোর ব্যাপারে কী ভাবে অনুমতি দিল স্থানীয় প্রশাসন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পদ্মজা। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ঝড় তোলেন তিনি।
আরও শুনুন: লাউডস্পিকারে আজানের পালটা হনুমান চালিশা পাঠ, অশান্তির আশঙ্কা কর্নাটকে
যদিও বিতর্ক দানা বাঁধতেই সাভারকরের ছবি তড়িঘড়ি ছাতা থেকে সরিয়ে ফেলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। ওই মন্দিরের সেক্রেটারি রাজেশ জানিয়েছেন, ওই ছাতায় মহাত্মা গান্ধী, ভগৎ সিং থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক ব্যক্তিত্বদেরইর ছবিই ছিল ওই ছাতায়। তবে ইতিমধ্যেই সাভারকারের ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজেশের কথায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় , এমন কোনও কাজই করতে চান না তারা। ত্রিশূর পুরমের মতো আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান সমস্ত রাজনীতির উর্ধ্বে বলেই দাবি তাঁর।
তবে ছবি সরে গেলেও বিতর্কে রাশ টানা যায়নি। মন্দির সজ্জায় সাভারকরের ছবি ব্যবহারের পিছনে হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্তের তত্ত্বেই সায় দিয়েছে কংগ্রেস ও বাম, দুই পক্ষই।