‘এ সব তো হামেশাই ঘটে।’ প্রায়শই এক ভাড়া দেখিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে বেশি টাকা দাবি করে বসে ক্যাব সংস্থাগুলি। কিন্তু যা হামেশা ঘটে না, তাই ঘটিয়ে ফেলেছেন মুম্বইয়ের এক ব্যক্তি। মাত্র বাষট্টি টাকার বিনিময়ে কয়েক হাজার টাকা লক্ষ্মীলাভ হল তাঁর। কীভাবে? কী ঘটেছিল আসলে? শুনে নিন।
বিভিন্ন বেসরকারি ক্যাব সংস্থার গাড়িতে চাপতে গিয়ে প্রায়শই অসুবিধার মুখে পড়তে হয় যাত্রীদের। অনেক সময়ই চালকেরা জানিয়ে দেন, অমুক জায়গায় যাবেন না। তমুক জায়গায় যাওয়া যাবে না। আবার কখনও অজান্তেই বেড়ে যায় ভাড়া। সে সব নিয়ে অনেক সময়ই অভিযোগ জানান বহু যাত্রী।
মুম্বইয়ের এই ব্যক্তির সঙ্গেও খানিকটা তেমন ঘটনাই ঘটেছিল। ক্যাব সংস্থাকে বারবার অভিযোগ করে লাভ না হওয়ায় ক্রেতা-সুরক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পেশায় উকিল স্রেয়াংশ মামানিয়া। সেই মামলাটি সৌভাগ্যক্রমে জিতেও গিয়েছেন ৩৪ বছরের ওই যুবক। পেয়েছেন ক্ষতিপূরণও। ঠিক কী হয়েছিল স্রেয়াংশের সঙ্গে। সেই গল্পই শোনাব আপনাদের।
আরও শুনুন: ‘নির্ঘাত মেনোপজ হয়েছে!’, বসের ধমকে ‘মর্যাদাহানি’, ২০ লক্ষ ক্ষতিপূরণ পেলেন মহিলা কর্মী
গত বছর জুনে মুম্বইয়ের কান্দিভিলি থেকে কালাচৌকি যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপক্যাব সংস্থার গাড়ি বুক করেন স্রেয়াংশ। বুক করার সময় ভাড়া দেখিয়েছিল ৩৭২ টাকা। তবে পরিবারের সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে স্রেয়াংশ দেখেন সেই ভাড়া বেড়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা। চালক জানান, চূড়ান্ত ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৪৩৪ টাকা।
কিন্তু এই অতিরিক্ত ৬২ টাকা দিতে আপত্তি জানান স্রেয়াংশ। প্রশ্ন করলে চালক জানান, “এমন তো হামেশাই ঘটে! এর জন্য় এত কথার কী আছে!” সামান্য টাকার জন্য স্রেয়াংশকে ঝামেলা করতে না করেছিলেন তাঁর পরিবারের লোকেরাও। কিন্তু বেঁকে বসেন যুবক। সঙ্গে সঙ্গেই ওই ক্যাব সংস্থার কাস্টোমার কেয়ার সার্ভিসের দ্বারস্থ হন স্রেয়াংশ। তবে সেখান থেকে কোনও উত্তর পাননি তিনি। আপাত ভাবে চালককে ভাড়া মিটিয়ে দিলেও ব্যাপারটি এত সহজে ভুলতে পারেননি স্রেয়াংশ।
পরে বিষয়টি নিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হন। গত বছর অগস্ট মাসে কনজিউমার ফোরামে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্রেয়াংশ। আর সেই আবেদন গ্রহণও করে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ সেই মামলা শোনে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত।
অবশেষে অ্যাদ্দিনে সুবিচার পেলেন স্রেয়াংশ। তবে প্রাথমিক ভাবে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন তিনি। তবে আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। তার বদলে ক্যাব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয় ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি মামলা বাবদ যা খরচা হয়েছে, তার জন্য তিরিশ দিনের মধ্যে আরও পাঁচ হাজার টাকা স্রেয়াংশকে মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। আর শেষমেশ সেই টাকা পেয়েওছেন স্রেয়াংশ।
আরও শুনুন: পোষা শুয়োরের প্রতি মায়া পড়ে গেছে, ঘরে রাখতে আইন-আদালত করছেন ব্যক্তি
মাত্র ৬২ টাকার জন্য এত দৌড়োদৌড়ি! স্রেয়াংশের এই লড়াই দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। তবে একরোখা স্রেয়াংশ জানিয়েছেন, ৬২ টাকাটা বড় কথা নয়। ক্যাবসংস্থার সফটওয়ারের এই গলদটার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করতে চান তিনি। দেখে হয়তো মনে হচ্ছে সামান্য ৬২ টাকা, কিন্তু এ ভাবে প্রত্যেক যাত্রীর থেকে প্রতিদিন যদি ১০০ টাকা করেও অতিরিক্ত নিতে থাকে ক্যাবসংস্থাগুলি, তাহলে সেই অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ভেবে দেখেছেন! আর এই অভ্যাসটাই পাল্টে দিতে চান পেশায় উকিল এই যুবক। আর তার জন্যই আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি, জয়ের পরে সাফ জানিয়েছেন স্রেয়াংশ। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নেটিজেনরা।