কিছু পেলে কিছু দিয়ে যেতে হয়।- এ কথাটা বলেন অনেকেই, কিন্তু কাজে করে দেখাতে পারেন ক’জনই বা! নিজে তিনি সহায়সম্বলহীন। ভিক্ষা করে কোনও মতে দিন গুজরান হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে যেটুকু যা জোটে, তার সামান্য সামান্য অংশও নিজের জন্য খরচ করেন না বৃদ্ধা। বরং সেই সঞ্চিত অর্থের সমস্তটাই তিনি বিলিয়ে দেন মানুষের জন্য। মানুষের পেট ভরাতে স্থানীয় মন্দিরে তিনি দান করেছেন ১ লক্ষ টাকা। এভাবেই সমাজের ঋণ মেটাতে চান অশীতিপর এই বৃদ্ধা। শুনুন, তাঁর কথা।
রোদ-ঝড় জল মাথায় করে প্রায় রোজই মন্দির চত্বরে দেখা যায় তাঁকে। মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে হাত পাতেন দুটো টাকার জন্য। উৎসবের দিনগুলোয় বেজায় ভিড় হয় মন্দিরে। সেদিন ভিক্ষা পাওয়ার আশা কিছুটা বেশি। তাই ছোটাছুটিও বেশি। বয়স আশি পেরিয়েছে। সেই শরীরেই মন্দিরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়ান বৃদ্ধা। কেউ সাহায্য করেন, কেউ বা মুখ ফিরিয়ে নেনন। তার পরেও যেটুকু যা মিলত সেটুকু জমিয়ে রাখেন যত্নে। গত ১৮ বছর ধরে এ নিয়মের অন্যথা হয়নি কখনও।
না, এতগুলো বছর ধরে একবারও নিজের জন্য ভিক্ষা করেননি এই বৃদ্ধা। বরং মানুষের কাছে হাত পেতে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে গিয়েছেন মানুষের জন্যই। সঞ্চিত অর্থের সামান্য কিছু অংশে কোনরকমে দিন কাটিয়ে বাকি সবটাই তিনি দান করে দিয়েছেন মন্দির তহবিলে।
আরও শুনুন: সম্প্রীতির নজির! হিন্দুদের ধর্মীয় শোভাযাত্রায় পুষ্পবৃষ্টি মুসলমান পড়শিদের
কর্ণাটকের উদুপী জেলার গঙ্গোলি এলাকার ছোট্ট গ্রাম কাঞ্চিগুড়ু। সেখানেই মন্দিরে মন্দিরে ভিক্ষা করে বেড়ান অশ্বথামা নামে ওই বৃদ্ধা। সম্প্রতি ভিক্ষা করে জমানো নিজের সমস্ত অর্থই তিনি দান করেছেন বনতাল তালুকের পোলালি এলাকার রাজারাজেশ্বরী মন্দিরে। সেই অর্থের পরিমাণ নেহাৎই কম নয়। প্রায় এক লক্ষ টাকা তিনি দান করেছেন নরনারায়ণ সেবার জন্য। প্রায় সমস্ত মন্দিরেই ‘অন্নদান’-এর আয়োজন করা হয়। যেখানে পেট ভরে প্রসাদ পান সকল ভক্ত। আর সেই খাতেই নিজের ভিক্ষাঅর্থ দান করেছেন এই বৃদ্ধা।
এর আগেও একাধিক বার নিজের ভিক্ষাপাত্র তিনি উজার করে দিয়েছেন কোনও না কোনও মন্দিরের তহবিলে। শালিগ্রামের গুরুনরসিংহ মন্দিরে এর আগে তিনি দান করেছিলেন এক লক্ষ টাকা। পোলালি শ্রী অখিলেশ্বর মন্দিরে দান করেছেন দেড় লক্ষ টাকা। উদুপীর বেশ কয়েকটি অনাথ আশ্রমেও অর্থসাহায্য করেছেন তিনি। এবার গঙ্গোলির এই মন্দিরে প্রায় এক লক্ষ ভক্তের জন্য অন্নদানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
আরও শুনুন: মেয়ে হিসেবে দত্তক রূপান্তরকামীকে, পেলেন জামাই… ছক ভাঙা সিদ্ধান্ত দম্পতির
১৮ বছর আগে স্বামীকে হারানোর পরে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন অশ্বথামা। ভিক্ষার টাকার সামান্য অংশই তিনি খরচ করেন নিজের জন্য। বাকিটা জমিয়ে রাখেন ব্যাঙ্কে। তার পর সেই টাকাই দান করে বেড়ান এদিকে-ওদিকে মানুষের জন্য।
বৃদ্ধার এই কাজে অবাক মন্দির কর্তৃপক্ষ। এত কষ্ট করে সঞ্চিত অর্থ কী অবলিলায় বৃদ্ধা দান করে চলেছেন এত বছর ধরে, তা আশ্চর্য। গোটা বিশ্বে সকলেই যখন নিজের একটু ভাল থাকার পিছনে দৌড়ে মরছে, সেখানে বৃ্দ্ধার এই অসীম ক্ষমতা বিস্মিত করেছে গোটা দুনিয়াকে। এসব নিয়ে অবশ্য একেবারেই ভাবিত নন অশ্বথামা। তাঁর বক্তব্য, সমাজ সংসার তাঁকে যা দিয়ে চলেছে সেই ঋণই শোধ করে চলেছেন বৃদ্ধা। এ পৃথিবীতে একজনও যেন অভুক্ত না থাকেন, এটুকুই শুধু চাওয়া তাঁর।