মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কামরা। তাতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু সে নিয়ম মানছে কজন! রেলের রিপোর্ট বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৪০০ পুরুষ আটক হন মহিলা কামরায় ওঠার অপরাধে। আর কী জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় মহিলা কামরায় উঠেছিলেন যুবক। সেই নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছিল। কামরায় থাকা পুলিশকর্মী সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করেন। তবে রেলের রিপোর্ট বলছে এই ঘটনা নতুন নয়। বরং প্রতিদিন জোর করে মহিলা কামরায় ওঠার অপরাধে আটক হচ্ছেন শয়ে শয়ে পুরুষ।
রেলসফরে বিভিন্ন নিয়ম মানতেই হয়। সঠিক জায়গার টিকিট কাটা থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট কামরায় ওঠা, নিয়ম না জানলেই হবে জরিমানা। অথচ সব নিয়ম জেনেও ভুল করেন কেউ কেউ। মহিলা কামরায় ইচ্ছাকৃত সফর সেই তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে। নারী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই বাসে, ট্রেনে মহিলাদের জন্য আলাদা বসার জায়গা রাখা হয়। কখনও ভুল বশত কখনও আবার ইচ্ছা করেই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে ঢোকার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। ধরা পড়লে কড়া শাস্তির মুখেও পড়তে হয়। তাতেও যেন কুছ পরোয়া নেহি! সম্প্রতি সেই ইঙ্গিত মিলল রেলের রিপোর্টেই। জানা যাচ্ছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে মোট ৯৫১৪৬ জন পুরুষ আটক হয়েছেন মহিলা কামরায় ওঠার অপরাধে। গড় হিসাব দেখলে, প্রতিদিন ৪০০ জন। একই ব্যক্তি একই অপরাধে বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। আর তাতেই অবাক হচ্ছেন রেল কর্তারা। রেলওয়ে অ্যাক্টের সেকশন ৬২-তে এই আইনের কথা বলা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত জায়গায় কোনও পুরুষ প্রবেশ করলে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হবে তাঁকে। বাস্তবে হয়ও তাই, তবু বারবার একই কাজ করেন কেউ কেউ। অবশ্য এমনও অনেকে রয়েছেন, যারা না বুঝে মহিলা কামরায় উঠে পড়েন। তবে জোর করে ওঠা এবং মহিলাদের হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে, এদের সংখ্যাই বেশি।
আসলে, মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এমন ঘটনার সংখ্যা নেহাতই কম নয়। আরজি করের ঘটনা প্রমাণ করেছে, সংগঠিত কর্মক্ষেত্রেও মেয়েরা নিরাপদ নয়। শুধু তাই নয়, রাতের পথ, নির্জন রাস্তা, অচেনা পুরুষের সঙ্গ এই সবই মেয়েদের পক্ষে সংকটের হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে গনপরিবহন যে বড়সড় প্রশ্নের মুখে থাকবে একথা বলাই বাহুল্য। প্রশাসনের তরফে যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মেলে। কিন্তু সাম্প্রতিক রিপোর্ট তৈরি করছে নতুন আশঙ্কা। শাস্তির ভয়কে তুড়ি মেরে যেভাবে জোর করে মহিলা কামরায় ওঠার চেষ্টা করছে কেউ কেউ, তা ভাবার মতো বিষয়। প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে কই? গড়ে ৪০০ পুরুষের মধ্যে অন্তত ২০০ জন যে ইচ্ছা করে এই অপরাধ করছে তা ভাবাই যায়! আর সেখানেই নারী নিরাপত্তায় ওঠা প্রশ্ন আরও গভীর হয়!