উৎসবে সেজেছে শহর। রাজপথে জনঅরণ্য। মণ্ডপেও বেজায় ভিড়। তার মধ্যে মহিলাদের স্তন-কোমরে হাত দিচ্ছে অচেনা পুরুষ। একজন নয়, এমন পৈশাচিক আনন্দের শরিক হতে চেয়েছে শতাধিক পুরুষ। তবে অন্যায় করে পার পায়নি তাদের কেউ। একটা মণ্ডপ থেকেই আটক হয়েছে ২৮৫ জন। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ছর ঘুরে মর্তে ফিরবেন উমা। আনন্দের উৎসবে মেতে উঠবে গোটা শহর। তবে মা দুর্গা আসার আগেই ঘুরে গেলেন পুত্র গণেশ। তাঁর পুজো উপলক্ষে রাজকীয় ভাবে সেজে উঠেছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। মুম্বই সহ দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনই এক মণ্ডপের ভিড়ে মিশে মহিলাদের নিগ্রহের চেষ্টা করায়, আটক ২৮৫ জন।
আরও শুনুন:
জোয়ার যখন জাগরণের, স্কুল-কলেজ ছেড়ে ৫০ হাজার পড়ুয়া আন্দোলনে
ঘটনাটি হায়দরাবাদের। গণেশপুজোয় এই শহর আলাদাভাবে সেজে ওঠে। রয়েছে একাধিক বিখ্যাত গণেশ মণ্ডপ। প্রায় ১০ দিন ধরে উৎসব চলে। শহরের বাইরে থেকেও অনেকেই হাজির হন তাতে শামিল হতে। মণ্ডপে পা রাখার জায়গা থাকে না। ভিড়ের নিরিখে সবাইকে টেক্কা দেন খৈরতাবাদ বড় গণেশ। এখানকার বিরাট মূর্তিই মূল আকর্ষণ। শহরের বাসিন্দারা তো বটেই, বাইরে থেকে কেউ এলেও এই মণ্ডপ দর্শণ করতে ভোলেন না। তাই কমিটির তরফেও নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। সবসময় পুলিশ মোতায়েন থাকে মণ্ডপে। তাতে বড় কোনও অপরাধ আটকানো যায় ঠিকই, তবে ভিড়ের মাঝে মহিলা নিগ্রহ আটকানো সবসময় সম্ভব হয় না। প্রতি বছর মণ্ডপে আসা মহিলারা বিভিন্নভাবে নিগ্রহের শিকার হতেন। সেই অসুবিধা মেটাতেই এবার ভিড়ের দিকে কড়া নজর রেখেছিল তেলেঙ্গানা পুলিশ। আলাদাভাবে মণ্ডপে হাজির ছিলেন মহিলা পুলিশের দল। তাঁরাও ভিড়ের মাঝে সাধারণ মানুষের মতোই মিশেছিলেন। আর তাতেই হাতেনাতে ধরা পড়েছে অপরাধীরা। নিজেদের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে অনেকেই মণ্ডপে ঢুকে মহিলাদের গায়ে হাত দিতে শুরু করেন। ভিড়ের মাঝে সুযোগ বুঝে মহিলাদের স্তন-কোমর এমনকি গোপনাঙ্গও ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। শুধু তাই নয়, মহিলাদের সঙ্গে অভদ্র আচরণ করতেও দেখা যায় অনেককে। কেউ কিছু বোঝার আগেই এরা ভিড়ের মাঝে মিশে যায়। ফলত অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন। তবে এবার আগেভাগেই প্রস্তুত ছিল মহিলা পুলিশের বিশেষ দল। হাতেনাতে অপরাধীদের ধরেছেন তাঁরা। এক-দুজন নয়, উৎসবের কদিন স্রেফ ওই একটি মণ্ডপ থেকেই আটক হয়েছে ২৮৫ জন। জানা গিয়েছে, ধৃতদের সকলকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পেশ করা হবে।
আরও শুনুন:
‘উঁচু জাতে’র যুবকের নামে পকসো! যৌন হেনস্তার প্রতিবাদ করে একঘরে ৫০টি দলিত পরিবার
মহিলাদের সুরক্ষায় আগেভাগেই ‘SHE’ নামে বিশেষ দল গঠন করে তেলেঙ্গানা পুলিশ। সেই দলই ছিল হায়দরাবাদের মণ্ডপে। মণ্ডপে আসা মহিলাদের সুরক্ষায় পুলিশের এই পদক্ষেপ রীতিমতো প্রশংসা কুড়িয়েছে। অপরাধীরা আটক হওয়ায় মহিলারাও খুশি। স্রেফ প্রমানের অভাবে এতদিন অপরাধ করেও পার পেয়ে যেত এই ধরনের মানসিকতার লোকজন। এবার উচিত শাস্তি পাবে তারা, এমনটাই মনে করছেন মণ্ডপে আসা মহিলারা। আসলে, ভিড়ের মাঝে এই ধরনের সমস্যায় আখচার পড়তে হয় মহিলাদের। নিজেদের মতো করে শরীর বাঁচিয়ে চলাফেরা করেন তাঁরা। কখনও প্রতিবাদে সরব হন, কখনও আবার মুখ বেজে মেনে নিতে হয় সবকিছু। প্রতিবাদ করে অপমান সহ্য করতে হয়েছে মহিলাকেই, এমন ঘটনাও এ দেশে নতুন নয়। তবে হায়দরাবাদের গণেশপুজো মণ্ডপে পুলিশ যেভাবে এই অপরাধ রুখতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে আশার আলো দেখছেন অনেকেই। এরপর এমন কিছু করার আগে দুবার ভাবতে হবে অপরাধীকে। ভয় পাবে তারা। এমনটাই মনে করছেন মহিলারা।