এ যেন গল্প হলেও সত্যি। সিনেমায় যেভাবে দোষীদের পাকড়াও করতে গোয়েন্দারা নেন ছদ্মবেশ। এ যেন অনেকটা ঠিক তেমনই। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তল্লাশি অভিযান চালালেন আয়কর দপ্তরের গোয়েন্দারা। রীতিমতো ছদ্মবেশে পাকড়াও করলেন দুষ্কৃতীদের। উদ্ধার হল বিপুল অঙ্কের সোনাদানা ও নগদ। বলিউড সিনেমার ধাঁচে এমনই রোমহর্ষক অভিযানের সাক্ষী রইল মুম্বই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই গল্পই।
হয় আর্থিক কেলেঙ্কারি কিংবা দুর্নীতি, কোথাও বা করফাঁকি। এমন খবর তো রোজই কানে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কোথাও ইডি, তো কোথাও সিবিআই, কোথাও আবার আয়কর দপ্তরের গোয়েন্দারা, গোটা দেশ জুড়ে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা।
খোদ মায়ানগরীর বুকে এবার এমনই রোমহর্ষক এক তল্লাশি অভিযান চালালেন আয়কর দপ্তরের গোয়েন্দারা। উদ্ধার হল বিপুল অঙ্কের অর্থ, সোনাদানা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। না, সেই অভিযান মোটেও সাদামাটা কোনও তল্লাশি ছিল না। মহারাষ্ট্রের জালনা এলাকার ওই অভিযানে যা হল, তা কোনও সিনেমার চেয়ে কম নয় মোটেই।
আরও শুনুন: ইদগাহ ময়দানে গণেশ পুজো নিয়ে আপত্তি ওয়াকফ বোর্ডের, ফের অশান্তির আশঙ্কা কর্ণাটকে
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মোটামুটি সমস্ত আয়োজন সেরেই রেখেছিলেন গোয়েন্দারা। তৈরি ছিল অভিযানের ব্লু প্রিন্টও। সেই মতোই ১২০টি গাড়ি ও ২৫০ জন আয়কর আধিকারিক বেরিয়েছিলেন সেদিন অভিযানে। তবে গাড়িগুলিতে এমন দূরত্ব বজায় রেখে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছি, যাতে কারওর সন্দেহ না হয়। না, ঘুণাক্ষরেও কারওর মনে হয়নি, যে কোনও তল্লাশির পরিকল্পনা রয়েছে। হবেই বা কী করে? গোয়েন্দারা যে নিয়েছিলেন ছদ্মবেশ।
বিশ্বাস হচ্ছে না তো? কিন্তু এমনটাই হয়েছে সেদিন মহারাষ্ট্রে। তদন্তকারীদের গোটা দলটাই সেদিন বেরিয়েছিল বরযাত্রীর বেশে। এমনকি কয়েকটা গাড়ি থেকে শোনা গিয়েছিল ‘দুলহন হাম লে যায়েঙ্গে’ বলে চিৎকারও চেঁচামেচিও। যেমনটা হয় বরযাত্রীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় আর কি। সব মিলিয়ে অভিনয়ে কোনও খুঁত ছিল না গোয়েন্দাদের। আর সেভাবেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিযুক্তদের বাড়ি।
আরও শুনুন: দেশপ্রেমের বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ, চোখের মধ্যে জাতীয় পতাকা আঁকলেন ব্যক্তি
দুটি নামজাদা ব্যবসায়ী গ্রুপের বাড়ি, ফার্মহাউস, গোডাউন-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। স্টিল, জামাকাপড় ও রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার সঙ্গে তারা জড়িত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। মোট পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চালানো হয় তল্লাশি। প্রায় ১৩ ঘণ্টার তল্লাশি শেষে মোট ৩৯০ কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। প্রায় ৫৬ কোটি টাকার নগদ, ৩২ কেজি সোনা ছাড়াও মিলেছে ১৪ কোটি টাকার হিরে। তাছাড়া বিভিন্ন দরকারি নথিপত্র তো রয়েইছে। রয়েছে ডিজিটাল ডেটাও।
সব মিলিয়ে সেদিন জালনায় যা ঘটেছে, তা হার মানাবে বলিউডের সিনেমাকেও। আয়কর দপ্তরের গোয়েন্দারা যে দক্ষতার সঙ্গে গোটা অভিযানটি চালিয়েছেন, তা এককথায় অভাবনীয়। না, তল্লাশি অভিযান তো বটেই, অভিনয়টাও যে তাঁরা খাসা করেছেন, তা কিন্তু মানতেই হবে।