কষ্ট না করলে কি কেষ্ট মেলে? সে কথা মনে করেই যেন প্রতিদিন অমানুষিক পরিশ্রম করে চলেছেন এই তরুণ। দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াই তাঁর স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে পাখির চোখ করেই রোজ ছুটে চলা তাঁর। কোনও বাধার কাছেই হার মানতে রাজি নন এই তরুণ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এক আশ্চর্য স্বপ্নের গল্প।
বয়স মোটে ১৯। এই বয়সেই নিজের ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের নয়ডা শহরের বাসিন্দা প্রদীপ মেহেরা। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছোবার জন্য যত পরিশ্রমই করতে হোক, আর যত বাধাবিপত্তিই আসুক, কোনও কিছুতেই পিছু হঠতে রাজি নন এই তরুণ। ঘটনাচক্রে তার এই সংগ্রামের কথা জানতে পেরেছিলেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক বিনোদ খাপরি। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় তা ভাগ করে নিয়েছেন তিনিই। আর তারপরেই নেটিজেনদের প্রশংসায় ভেসে গিয়েছেন প্রদীপ।
আরও শুনুন: উচ্চতা ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি, তাতেই বেসামাল পুরুষসঙ্গীরা! আজব সমস্যায় বিশ্বের সবথেকে লম্বা মডেল
ভাবছেন, এ আর এমন কী? এই বয়সেই তো পড়ুয়ারা নিজেদের পছন্দসই বিষয় বেছে নেয়। সিদ্ধান্ত নেয় কোন পেশায় যোগ দেবে তারা। হ্যাঁ, এই তরুণও বস্তুত তেমন কাজই করেছেন। তবে তাঁর পথটা বেশ আলাদা। যে বয়সে তাঁর মতো আরও অনেক ছেলেমেয়ের কাছেই জীবনটা বেশ সহজ এবং মসৃণ, তাঁর জীবনটা কিন্তু আদৌ তেমন নয়। এখনই রুজিরোজগারের প্রয়োজনে চাকরি খুঁজে নিতে হয়েছে তাঁকে। না, কোনও হোয়াইট-কলার জব নয়। একটি রেস্তরাঁর কাজ। কিন্তু সেই বাধ্যত কাজ করার জেরে নিজের স্বপ্নকে মেরে ফেলতে রাজি নন এই তরুণ। তাঁর স্বপ্ন দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া। আর সেই লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েই নিজের ব্যস্ত দিনপঞ্জির মধ্যেও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রদীপ।
আরও শুনুন: উপন্যাসে লেখা ছিল মস্ত জাহাজডুবির কথা, ঠিক ১৪ বছর পর সত্যিই ডুবেছিল টাইটানিক
আসলে, এই অনুশীলন করার সময়েই তাঁকে দেখতে পেয়েছিলেন ওই পরিচালক। রাতের নয়ডার শুনশান রাস্তায় ছেলেটিকে দৌড়তে দেখে কৌতূহলী হয়েই গাড়ি থামিয়েছিলেন তিনি। দেখেছিলেন ছেলেটি ঘেমে গিয়েছে, হাঁপাচ্ছেও, কিন্তু দৌড় থামাচ্ছে না সে। তাকে গাড়িতে লিফট দিতে চেয়েছিলেন পরিচালক। আর তখনই ছেলেটির উত্তর চমকে দেয় তাঁকে। প্রদীপ জানান, আসলে এই রাত্রিটুকুই তার অনুশীলন করার সময়। তার মা অসুস্থ, আপাতত তিনি হাসপাতালে ভরতি। বাড়িতে রয়েছে আরেক ভাই। সকালে রান্না এবং ঘরের কাজ সামলাতে গিয়ে অনুশীলন করার সময় মেলে না। তাই রেস্তরাঁয় কাজ সেরে রোজ দৌড়েই বাড়ি ফেরেন প্রদীপ। এইভাবেই চলে তাঁর প্র্যাকটিস। নয়ডা শহরের অভিজাত এলাকার ওই রেস্তরাঁ থেকে প্রদীপের বাড়ির দূরত্ব জেনে অবাক হয়ে যান ওই পরিচালক। ১০ কিলোমিটার! ব্যাগ কাঁধে এই গোটা পথটাই দৌড়ে অতিক্রম করেন প্রদীপ, রোজ। ওই পরিচালক তাঁকে রাতের খাবার খাওয়াতে চাইলেও সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন প্রদীপ। জানান, নাইট শিফটে কাজ করে তাঁর ভাই। ভাইকে রেখে একা একা রাতের খাওয়া সেরে ফেলতে রাজি হননি তিনি।
টিনএজের ঠিক শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে এই তরুণ। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা, যে, ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়াতেই তাদের জীবন কেটে যায়। কিন্তু এই বয়সের অনেকেই যে নিজেদের কাজকেও পাখির চোখ করে তুলতে পারে, সে কথাই ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রদীপ। আর তার এই সাধনাকেই তারিফ জানাচ্ছে নেটদুনিয়া।