জন্মস্থান কুম্ভমেলা। এমনটাই লেখা থাকবে ১১টি শিশুর বার্থ সার্টিফিকেটে। কারণ এদের জন্মই হয়েছে কুম্ভ চত্বরে থাকা হাসপাতালে। ধর্মীয় মেলাইয় মৃত্যুমিছিল নিয়ে যাবতীয় যা হইচই, তার মাঝে এই খবর যেন আশার আলো দেখাচ্ছে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু। ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। সংসদে বিরোধীদের অভিযোগ, মৃতের সংখ্যা লুকোচ্ছে প্রশাসন। পালটা, চক্রান্তের তত্ত্ব খাড়া করেছে যোগী সরকার। তবে এর প্রভাবে অনেকেই যে কুম্ভে যাওয়া সিদ্ধান্ত বদল করেছেন তা বলাই যায়। এই আবহে সামনে এল নতুন তথ্য। স্রেফ মৃত্যুমিছিল নয়, নতুন জীবনের আলোও ফুটছে সেই কুম্ভেই।
ধর্মীয় কারণে এবারের কুম্ভ বিশেষ। বলা হচ্ছে, ১৪৪ বছর পর আয়োজন হয়েছে এই মেলার। অন্যান্য বার যা হয় তা মহাকুম্ভ নয়। তাই ভিড় হলেও, এবারের পরিসংখ্যান ছাপিয়ে যায় না। যে কারণে স্বাভাবিক ভাবেই দেশজুড়ে চর্চায় রয়েছে কুম্ভ। কখনও ভাইরাল সাধুর সৌজন্যে, কখনও আবার ভক্তদের ভোগান্তির দরুণ। তবে কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা একপ্রকার সকলকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। পুণ্যের টানে কুম্ভে গিয়ে চিরতরে নিজের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন বহু। অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। পরে জানা গিয়েছে, তিনি মৃত। প্রথমে সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল, কুম্ভে পদপিষ্টর ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। তবে সেই সংখ্যা যে সঠিক নয়, তা জোর গলায় দাবি করতে থাকেন বিরোধীরা। বাস্তবেও দেখা যায়, সেদিনের ঘটনার পর নিখোঁজ হয়েছেন এমন অনেকের মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। সবমিলিয়ে বিষয়টা ভয়াবহ আকার নেয়। এর মধ্যেই কুম্ভে স্নান সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আস্থার ডুব দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। যোগী আদিত্যনাথ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তারকা রাজনীতিবিদ শাহী স্নান সেরেছেন। বিতর্ক পালটা বিতর্কের মাঝে সেই নিয়েও চর্চা কম হয়নি। এই আবহে জানা গেল, কুম্ভমেলাতেই পৃথিবীর আলো দেখছেন নতুন প্রাণ। মা হচ্ছেন আগত ভক্তদের মধ্যে অনেকেই। বিষয়টা তেমন অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু সেইসব শিশু যাদের জন্মস্থান কিনা প্রয়াগের কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণ, তাদের নিয়ে আলাদাভাবে চর্চায় মেতেছে নেটদুনিয়া।
যেখানে একবার পা রাখলেই নাকি জীবনের যাবতীয় পাপ ধুয়ে যায়, সেই কুম্ভমেলা ১১টি শিশুর জন্মস্থান। এখনও মেলা শেষ হওয়ার ঢের বাকি। তাই সদ্যোজাতের সংখ্যা যে বাড়তে পারে, তা বলাই যায়। আসলে, কুম্ভমেলায় আগত ভক্তদের সুবিধার্থে একাধিক মেডিক্যাল ক্যাম্প গড়া হয়েছে। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি আস্ত একটা হাসপাতালও রয়েছে প্রয়াগ সঙ্গম এলাকায়। সেখানে আইসিইউ, অস্থায়ী লেবার রুম, জেনারেল ওয়ার্ড সবই রয়েছে। মেলায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসছেন। তাঁদের মধ্যে কোনও প্রসূতিও থাকতেই পারেন। এই ভাবনা থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিল যোগী প্রশাসন। বাস্তবে দেখা যায়, কোনও একজন নয়, বরং একাধিক প্রসূতি মহিলা মেলায় এসেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেলার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। যেহেতু প্রসবের যাবতীয় ব্যবস্থা ছিল, তাই মেলা প্রাঙ্গণেই সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছেন তাঁরা। এখনও অবধি মোট ১১ শিশুর জন্মের খবর মিলেছে। আসলে, এ জীবনে মহাকুম্ভ মেলার সাক্ষী থাকতে পারবেন না বর্তমান প্রজন্মের কেউই। তাই গর্ভে সন্তান নিয়েই মেলায় হাজির হয়েছিলেন এঁরা। ভাবেননি সেখানেই প্রসব করাতে হবে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিন বিধাতার ইচ্ছা! তাই কুম্ভমেলা চত্বরেই সন্তানের জন্ম দিলেন এই মহিলারা।