আমাদের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কত তুচ্ছ বিষয়েই না আমরা মনভার করে থাকি! চলার পথে সামান্য প্রতিবন্ধকতা এলেই যেন হতাশা ঘিরে ধরে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ভাঁড়ারের যে গল্প আমরা প্রতিদিন লিখে চলেছি, সে গল্পে যেন নতুন মোড় আনতে পারে এই ব্যক্তির হাসিমুখ। যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যাওয়ার নামই জীবন।
ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আমাদের খুব চেনা-জানা কথা। তবে, সে কথাটি কি আমরা মাথায় রাখি সবসময়? মনে হয় না। কেননা, চলার পথে সামান্য প্রতিবন্ধকতা এলেই যেন হতাশা ঘিরে ধরে। চলে আসে অতলান্ত অবসাদ। ডিপ্রেসনের ব্যক্তিগত গল্পগুলো চারিদিকে ঘুরে বেড়ায় যখন, মনে হয়, পথের খোঁজ বড়ই কঠিন। জীবনের ঠিক এরকমই চক্রব্যূহে এসে আমাদের আলোর সন্ধান দিতে পারে এক ব্যক্তির গল্প। গল্প নয়, আদতে তা তাঁর জীবনই।
দিল্লির এই যুবকের জীবনের গল্প সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। মাঝারি উচ্চতার এক যুবক তিনি। পরনে লাল রঙের টি-শার্ট, সেখানে উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর কর্মক্ষেত্রের লোগোটি। চোখে চশমা আর পিঠে ব্যাগ। আর পাঁচজনের মতোই দিব্যি হেসে-খেলে স্কুটি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবুও তাঁকে দেখলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও যেন থমকে যেতে হয়। কেন জানেন? কারণ তাঁর দুটি হাত-ই নেই। দুই হাত কবজি পর্যন্ত, আর পাঁচজনের মতো নয়। তবে তাতে কী! সেই হাতের জোরেই স্কুটি চড়ে তিনি দিল্লির অলিতে-গলিতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার। এক খাবার সরবরাহকারী সংস্থায় তিনি এখন কর্মরত, ফলত এটিই তাঁর কাজ। আর তাঁকে দেখে চমকে যাচ্ছেন প্রায় প্রত্যেকেই। সবথেকে বড় ব্যাপার হল, শারীরিক অসুবিধা থাকলেও তাঁর মুখের হাসিটি মুছে যায়নি। নিজের কাজ নিয়ে তিনি অসন্তুষ্টও নন। হাসিমুখে যখন খাবার পৌঁছে দিয়ে স্কুটি চালিয়ে তিনি বেরিয়ে যাচ্ছন, তখন অনেকেই কার্যত হতবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছে এই ব্যক্তির ভিডিও। জীবনযুদ্ধের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে যিনি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁর লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। সকলেরই বক্তব্য এই মনের জোর যেন আমাদের সকলের জীবনের সমস্ত অপ্রাপ্তির গ্লানিকে দূরে ঠেলে দিয়ে এগিয়ে চলার পাথেয় হয়ে ওঠে। উৎসবের মরশুমে অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থাগুলিতে বেড়েছে ব্যস্ততা। ভিডিওতে ব্যক্তিটি বলেছেন, এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশায় কাজটি করছেন তিনি। দু-হাত ছাড়াও যে হাতের পাঁচ উপার্জন করা যেতে পারে, তা যেন হাতে-নাতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি।
এই ব্যক্তির জীবনের গল্প আমাদের অন্য এক উপলব্ধির সামনে এনেও দাঁড় করিয়ে দেয়। আমাদের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কত তুচ্ছ বিষয়েই না আমরা মনভার করে থাকি! তাই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ভাঁড়ারের যে গল্প আমরা প্রতিদিন লিখে চলেছি, সে গল্পে যেন নতুন মোড় আনতে পারে এই ব্যক্তির হাসিমুখ। প্রতিবন্ধকতা নানা রকমের হতে পারে। কখনও তা শারীরিক, কখনও বা পারিপার্শ্বিক। তবে সে সব হাসিমুখে পেরিয়ে যাওয়ার নামই যে জীবন, এই যুবক তা যেন আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছেন। বড় মানুষের বড় গল্প আমাদের প্রেরণা জাগায়। তবে, মানুষের ইতিহাস জানে সাধারণের এই ছোট ছোট গল্পই আমাদের সত্যিকার অনুপ্রেরণা।