নোট বলতেই প্রথমে কী মনে আসে? এমন একটা কাগজ, যার অর্থমূল্য রয়েছে, তাই তো? কিন্তু এমন কোনও নোট কি আদৌ হওয়া সম্ভব, যেখানে কোনও টাকার অঙ্কই নেই? কিংবা বলা ভাল, টাকার অঙ্ক শূন্য? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কম থেকে বেশি, যাই হোক না কেন, নোটে তো টাকার অঙ্ক থাকবেই। কয়েক দশক আগে এক দুই আর পাঁচ টাকার নোট পাওয়া যেত অনায়াসেই। পরে সেই জায়গা নিয়েছে কয়েন। কিন্তু ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোটেরা এখনও রাজত্ব করছে বহাল তবিয়তে। নোটবন্দির দৌলতে পুরনো ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিল বটে, কিন্তু বাজারে রমরমিয়ে চলে এসেছে নতুন ৫০০ আর ২০০০ টাকার নোট। সুতরাং নোট মানেই যে টাকা, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কেউ কি কখনও জিরো রুপি নোট, অর্থাৎ শূন্য টাকার নোটের দেখা পেয়েছেন? কী ভাবছেন, আজগুবি কথা এসব? আজ্ঞে না। তাহলে শুনুন।
আরও শুনুন: চোরেদের আজব কীর্তি! চুরি হয়ে গেল ৫৮ ফুট লম্বা আস্ত একখানা সেতু
এদেশেই আপনি দেখা পেতে পারেন এইরকম নোটের। বস্তুত, আজ নয়, প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরেই এই নোটের অস্তিত্ব রয়েছে ভারতে। আরও আশ্চর্যের কথা হল, অন্যান্য সব নোট বাজারে আসার আগে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয় আরবিআই, তথা রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। কিন্তু এই বিশেষ নোটটি ব্যতিক্রম। কারা তাহলে তৈরি করে এই নোট? আর যে নোটের কোনও মূল্যমান নেই, তেমন নোট তৈরি করার উদ্দেশ্যই বা কী?
আসলে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল এই নোট। ২০০৭ সালে ‘ফিফথ পিলার’ নামে তামিলনাড়ুর একটি এনজিও এরকম নোট তৈরি করে। হিন্দি, তেলুগু, কন্নড়, মলয়ালম ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় ছাপা হয়েছিল এই নোট। রেলস্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, বাজারের মতো জনবহুল এলাকায় এই নোট বিলি করা হত। কিন্তু কেন?
আরও শুনুন: শত্রুদের চোখে ধুলো দিতে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল আস্ত তাজমহল, কীভাবে জানেন?
বলাই বাহুল্য, ‘ফিফথ পিলার’ নামটিই একটি বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে। গণতন্ত্রকে যে চারটি স্তম্ভ ধারণ করে থাকে বলে মনে করা হয়, সেই স্তম্ভগুলির মতোই মর্যাদার শরিক তারাও, যেসব সংস্থা দেশের সাংবিধানিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্পষ্টতই, এই সংস্থাটি এহেন নামকরণের মধ্যে দিয়েই নিজেদের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি রুখে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই কাজ করে এই সংস্থা। আর সেইজন্যই এইরকম জিরো রুপি নোটের প্রচলন করেছিল তারা। অস্বীকার করার জায়গা নেই, অনেক সতর্কতা সত্ত্বেও দুর্নীতি বা ঘুষ দেওয়ার ঘটনা আটকানো যায় না কখনও সখনও। সেইসব ক্ষেত্রে এই নোট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় এই সংস্থা। যা ঘুষ নেওয়ার অভ্যাসে দেওয়াল তুলবে তো বটেই, দুর্নীতিগ্রস্ত সেইসব লোকের দিকে পরোক্ষে ছুড়ে দেবে বিদ্রুপও। অর্থাৎ সারকথাটি হল এই যে, কেউ যদি অসাধু উদ্দেশ্যে টাকা চায় তবে তাকে এই জিরো রুপি নোট দিয়েই ক্ষান্ত করা যেতে পারে। তাতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। বলতে গেলে, শূন্য টাকার নোটের অর্থমূল্য নেই ঠিকই, কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে তার মূল্য মোটেও শূন্য নয়। বরং কার্যবিশেষে শূন্য টাকার নোটই কোটি কোটি টাকার থেকেও দামি হয়ে উঠতে পারে।