ঘর বাঁধার আগে সঙ্গীর সঙ্গে ঘর করে নেওয়া জরুরি। পরামর্শ অভিনেত্রী জিনাত আমনের। তবে, সম্প্রতি বেশ আইনি আওতায় চলে আসছে এই ধরনের সম্পর্ক। প্রায় যেন বিয়ের কাছাকাছিই চলে এসেছে লিভ-ইন। তাহলে কি দূর ভবিষ্যতে বিয়ে ব্যাপারটাই উবে যাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঘণ্টাকয়েক সঙ্গে থাকা এক কথা। আর সম্পর্ক সারা জীবন বইতে পারা, অন্য কথা। তা মোটেও সহজ নয়। তাই ঘণ্টাকয়েকের ভালো-লাগা দিয়ে যদি জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে গোলমাল বাধতেই পারে। অভিনেত্রী জিনাত আমন তাই বলছেন, আগেভাগেই সবটুকু বুঝে নেওয়া ভালো। তাঁর পরামর্শ, বিয়ের আগে সবারই উচিত সহবাস বা লিভ-ইন করে পরস্পরকে বুঝে নেওয়া।
আরও শুনুন
মা-বাবা ‘লিভ ইন’ করলেও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে সন্তান, রায় সুপ্রিম কোর্টের
জিনাতের যুক্তি মন্দ নয়। বরং আধুনিক জীবনযাপনের ধরনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই তিনি এ কথা বলছেন। এমন নয় যে শুধু বাইরের মানুষদের জন্য তাঁর এমন পরামর্শ। নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলতে তিনি দ্বিধা করেননি। তাঁর বক্তব্য, যৌথযাপনে অনেক ছোট ছোট জিনিস থাকে, যা একসঙ্গে না থাকলে বুঝতে পারা যায় না। যেমন ধরা যাক, ডিনারে কী খাওয়া হবে তাও দাম্পত্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বা, একটাই বাথরুম দুজনে ব্যবহার করতে পারবেন কি-না? অথবা, সঙ্গীর মনমেজাজ খারাপ হলে তার সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করা উচিত বা উচিত নয়? এরকম ছোট ছোট অনেক বিষয় থাকে যা একসঙ্গে বাস না করলে বোঝা যায় না। আর তাই বর্ষীয়ান অভিনেত্রীর মত, বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই ছোটখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো বুঝে নেওয়া জরুরি। কেননা, ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় বিয়ে শুধুমাত্র দুজন মানুষের একত্রযাপন নয়; সেখানে দুটো পরিবার এবং অনেকগুলো মানুষ জড়িয়ে থাকেন। উপরন্তু সেখানে সরাসরি সরকারও জড়িয়ে যায়। অর্থাৎ আইনি বৈধতার বিষয়গুলিও চলে আসে। আর তাই কোন কারণে যদি বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত কেউ নেন, তাহলে তাঁকে একটা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই যেতে হয়। তা এড়াতেই জিনাতের এই আগেভাগে পরস্পরকে বুঝে নেওয়ার পরামর্শ।
তবে সত্যিই কি লিভ-ইনে এখন আর সেই জটিলতা এড়ানো সম্ভব? দুজন প্রাপ্তবয়স্ক সমমনস্ক মানুষ একসঙ্গে থাকবেন। বনিবনা না হলে সসম্মানে চলে যাবেন। সম্পর্কের এই বিন্যাসে অনেককানি স্বাধীনতার অবকাশ ছিল। তবে, সম্প্রতি যেভাবে সহবাসকে আইনি আওতায় আনার ভাবনা শুরু হয়েছে, তাতে বোধহয় বিয়ে এবং লিভ-ইনের ধারণা প্রায় মিলেমিশে যেতে শুরু করেছে। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে যে অভিন্ন বিধি চালু হয়েছে, সেখানে লিভ-ইনের ক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশপাশি, লিভ-ইন যাঁরা করবেন, তাঁদের পরিবারকেও সে বিষয়ে জানানো হবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের একটি যুগান্তকারী রায়ের দিকেও নজর দেওয়া যেতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত যে, আইনি বিয়ে না হলেও, লিভ-ইনের ক্ষেত্রেও একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর, সম্পর্কে বিচ্ছেদের দরুন মহিলা খোরপোশ পেতে পারেন। এই রায়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করতে হবে। কেননা, লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা মহিলাদের উপর হেনস্তার ঘটনা এতে কমবে। সেদিক থেকে এই রায় বেশ সদর্থক একটি পদক্ষেপ। পাশাপাশি বোঝা যাচ্ছে। লিভ-ইন সম্পর্কে এতদিনের যে ধারণা তা ক্রমশ বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে আইনি ব্যবস্থার সূত্রেই।
আরও শুনুন:
ক্লাসে-রিহার্সালে দুর্ব্যবহারই দস্তুর! তাহলে আর হেনস্তা চেনার উপায় কী?
ফলত, জিনাত যে জটিলতায় ঢোকার আগে সঙ্গীকে বুঝে নেওয়ার কথা বলছিলেন, তা বর্তমানে আর সেভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। এ কথা ঠিক যে, আইনি আওতা বাড়লে লিভ-ইনের ভিতর যে স্বাধীনতা ছিল, তা অনেকাংশেই সংকুচিত হবে। অপরদিকে এই স্বাধীনতার নামে সম্পর্কে যে ক্ষমতার অপব্যবহার চলে, তা আটকাতে আইনি পরিসর জরুরি হয়ে পড়ছে। বলতে গেলে আধুনিক যাপনের নিরিখে শাঁখের করাতে পড়েছে লিভ-ইন সম্পর্ক। ক্রমশ তা যেন আইনি বিয়ের কাছাকাছিই পৌঁছে যাচ্ছে। এখনই যে দুই ধরনের সম্পর্ক একেবারে মিলেমিশে গিয়েছে তা বলা যায় না। আইনি ক্ষেত্রেও দুই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফারাক আছে। তবে, লিভ-ইনের নানা দিক যেভাবে আইনি আওতায় চলে আসছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বিয়ের সঙ্গে এর খুব একটা পার্থক্য থাকবে না। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দুটো, বিয়ের মতো প্রতিষ্ঠান কি তাহলে ভবিষ্যতে উবে যাবে? নাকি লিভ-ইন স্বাধীনতা হারালে তা থেকে সরে আসবেন আধুনিকমনস্ক তরুণ-তরুণীরা? উত্তর এখনই স্পষ্ট নয়। তবে লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশে আইনি-মানচিত্র যে দ্রুত বদলাচ্ছে তা স্পষ্ট। তার দরুন ভবিষ্যতে সম্পর্কের রূপরেখাও যে বদলে যে পেতে পারে, সে সম্ভাবনা তাই কোনও ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।