যেন প্রিয় মানুষ! ঠিক সেভাবেই গাছকে আলিঙ্গন করছেন এক যুবক। যে কাজ করতে তিনি ভালোবাসেন, সেই কাজ তাঁকে এনে দিল বিশ্বস্বীকৃতিও। আসুন শুনে নেওয়ার যাক সেই যুবকের গল্প।
বয়স ২৯, পড়াশোনা করেন বনবিদ্যা নিয়ে। অর্থাৎ বনসংরক্ষণ নিয়েই তাঁর যাবতীয় চিন্তাভাবনা। সুতরাং সবুজের নেশা যে তাঁকে পেয়ে বসবে, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে! অরণ্য এবং গাছগাছালি তিনি ভালোবাসেন। আর তাই বন্ধুকে যেভাবে আলিঙ্গন করে কেউ, সেভাবেই আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিতে পারেন গাছকে। সেই কাজ করেই গিনেস বুকে নাম তুলেছেন এক যুবক।
আরও শুনুন:
পুরুষ নয়, শরীরী প্রেমের সাধ মেটাচ্ছে গাছ! সুখের গোপন কথা ফাঁস মহিলার
গাছ বাঁচাতে আলিঙ্গন হয়ে উঠতে পারে হাতিয়ার। তা দেখা গিয়েছিল চিপকো আন্দোলনের সময়। শিল্পের স্বার্থে অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলেন মানুষ। হাতে হাত রেখে গাছকে ঘিরে দাঁড়িয়ে, কখনও আবার গাছকে আলিঙ্গন করেই তাঁরা বার্তা দিয়েছিলেন যে, অরণ্য ধ্বংস করা চলবে না। সাতের দশকের সেই আন্দোলন আজও পরিবেশকর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত সারা বিশ্বে যখন পরিবেশের বড় বদল টের পাওয়া যাচ্ছে, তখন বাড়ছে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে ভাবনাও। আর সেই প্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে অরণ্যচিন্তা। নগরায়ন এবং শিল্পের স্বার্থে যেভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছে তার প্রভাব পড়ছে মানবসভ্যতার উপরেই। বিশ্ব উষ্ণায়নের থাবা মোটামুটি মানুষের অস্তিত্বকেই ক্রমশ প্রশ্নচিহ্নের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আর তাই গাছ লাগানো বা গাছ সংরক্ষণের কথা বারবার উঠে আসছে আলোচনায়। ঠিক সেই আবহেই গাছকে আলিঙ্গন করে রেকর্ড গড়লেন ওই যুবক।
ঘানার এই যুবকের নাম আবুবকর তাহিরু। গাছকে আলিঙ্গন করেই গিনেস বুকে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। তথ্য বলছে, এক ঘণ্টায় মোট ১১২৩টি গাছকে আলিঙ্গন করেছেন তিনি। তবে, এ কাজ যত সহজ মনে হয়, ঠিক ততটা ন। গিনেসের নিয়ম অনুযায়ী যেমন-তেমন করে আলিঙ্গন করলে চলে না। ঠিক যেভাবে মানুষকে আলিঙ্গন করতে হয়, সেভাবেই গাছকেও জড়িয়ে ধরার নিয়ম। উপরন্তু গাছের কোনও ক্ষতি হওয়া চলবে না। সব শর্ত মেনেই এই রেকর্ড গড়েছেন যুবক। তাঁর বৃক্ষ-আলিঙ্গনের ভিডিও শেয়ার করেছে গিনেস কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন:
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে! শুধু টাকা নয়, নির্বাচনী আশ্বাসে জুড়ছে পরিবেশের ভাবনাও
এই রেকর্ড অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত। কেউ তাঁর এই রেকর্ড ভবিষ্যতে ভাঙতেই পারেন। তবে, যে সময়ে তিনি এই রেকর্ড গড়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য যে কোনও বিষয়েই হয়তো তিনি রেকর্ড গড়তে পারতেন। তবে, তিনি বেছে নিয়েছেন গাছকে আলিঙ্গনের বিষয়টিই। হয়তো বনবিদ্যার ছাত্র হিসাবেই এই কাজ করেছেন তিনি। তবে, তাঁর কাজ বার্তা দিচ্ছে গোটা বিশ্বকেই। যে সময় গাছ ধ্বংসের জন্য পরিবেশ বিপন্ন, সেই সময় গাছকে আলিঙ্গন করে রেকর্ড গড়া, নিঃসন্দেহে পরিবেশভাবনারই সেরা বিজ্ঞাপন।