ঘড়িতে বেলা এগারোটা। এদিকে তখনও ঘুম ভাঙেনি। অনেকের বাড়িতেই এমনটা মোটেও সহজভাবে মেনে নেওয়া হয় না। ঘুম সম্পূর্ণ হোক বা না হোক, এত বেলা অবধি ঘুমালে মহা বিপদ। কিন্তু জানেন কি, সংবিধান অনুযায়ী এই কাজ অপরাধের সমান। জোর করে কেউ আপনার ঘুম ভাঙালে তার বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারেন আপনি। কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
ঘুমোতে কে না ভালবাসে বলুন! কিন্তু নির্বিঘ্নে ঘুম অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। কারণ অবশ্য একটা নয়। একাধিক কারণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে ঘুমের। কখনও বাড়ির বড়দের ডাকাডাকি, আবার কখনও অন্য কিছু। নিশ্চিন্তে যতক্ষণ ইচ্ছা ঘুমানোর কপাল অনেকেরই নেই। কিন্তু সংবিধান বলছে, প্রত্যকের ভারতীয় নাগরিকের যতক্ষণ খুশি ঘুমানোর অধিকার রয়েছে। কেউ জোর করে ঘুম ভাঙিয়ে দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করা যেতে পারে।
আরও শুনুন: বাঁচাতে হবে নেতাজিকে, স্বামীকেই খুন করেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রথম গুপ্তচর নীরা
গল্প হোক বা বাস্তবে, ঘুমাতে ভালবাসেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমনকি দিনের পর দিন ঘুমিয়ে কাটান, এমন চরিত্রেরও উল্লেখ মেলে বিভিন্ন গল্পে। কুম্ভকর্ণের কথাই ধরা যাক। দশাননের এই ভাই প্রায় ৬ মাস ঘুমিয়ে কাটাতেন। অসময়ে তাঁর ঘুম ভাঙালে মহাবিপদ। সামনে যাকে পাবেন তাকেই হত্যা করতে উদ্যত হতেন এই রাক্ষস। অথচ রামের সঙ্গে যুদ্ধের সময় ঠিক তেমনটাই করতে হয়েছিল। রেগে গিয়ে বানর সেনা বড় একটা অংশ একাই সাফ করে দিয়েছিলেন কুম্ভকর্ণ। বাস্তবে যদিও ঘুম ভাঙানোর অপরাধে এমনটা করার অধিকার নেই আপনার। তবে কিছুই যে করতে পারবেন না তা নয়। সংবিধান অনুযায়ী সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মালা করতে পারেন আপনি।
আরও শুনুন: ৫ বছরে আত্মহত্যা ৯৮ পড়ুয়ার! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিস্থিতি
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। অসময় ঘুম ভাঙানোর অপরাধে যে কারও বিরুদ্ধে আদালতে নালিশ ঠুকতে পারেন আপনি। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার’-এর অধীনে ঘুমের অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে ঘুমানোর অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর সেখানেই স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, জোর করে কারও ঘুম ভাঙানো একেবারেই অনুচিত। একে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতোই মনে করা হয়। তাই এমনটা করলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাও করা যেতে পারে। জানা গিয়েছে, অনেকেই এই ইস্যুতে আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন। ২০১২ সালে যোগগুরু রামদেবের সমাবেশে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। পুলিশ এসে জোর করে তাঁর ঘুম ভাঙায় বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তি। আর এতেই চটে গিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। মামলায় জয় হয় তাঁরই। তখনই সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন বিচারপতি। জোর করে ঘুম ভাঙিয়ে ওই ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেই, পর্যবেক্ষণ ছিল তাঁর। শুধু এই একটা ঘটনা নয়। জোর করে ঘুম ভাঙানোর অভিযোগ নিয়ে আরও অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আর প্রত্যেকবারই সংবিধানের এই ধারা অনুযায়ী সুবিচার পেয়েছেন তাঁরা।