ভাবুন তো, একদিন দেখা গেল আপনার পাতে ভাত নেই। রুটি নেই। কোনও তরিতরকারিও নেই। না, এমন নয় যে আপনার কাছে খাবার কেনার মতো টাকা নেই। কিন্তু বাজারে কোনও চাষ করা শস্য খুঁজেই পাচ্ছেন না আপনি। কারণ, কোনও শস্যের বীজ আর অবশিষ্ট নেই বলে শস্য উৎপাদন করাই সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক এই ভয় থেকেই শস্যের বীজ জমিয়ে রাখার কথা ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
আমার-আপনার রোজকার খাবারের তালিকায় কী থাকে? যা-ই থাকুক, তার উৎপত্তি যে চাষের মাঠে, সে কথা বলাই বাহুল্য। আজকাল আমরা যতই প্রসেসড ফুড কিংবা সিনথেটিক ফুডের দিকে ঝুঁকি না কেন, থালা ভরা খাবারদাবারের জায়গায় একখানা কৃত্রিম ট্যাবলেটে কাজ চালিয়ে দিতে আমরা মোটেই রাজি নই। সুতরাং চাষ করা শস্যেরও কোনও বিকল্প নেই। এবার আপনি বাড়ির টবে খান দুই লংকা-বেগুন গাছ কি একটু ধনেপাতা-পালং শাক চাষ করুন, বা কোনও কৃষক তার দশ বিঘা মাঠে ধান চাষ করুন, দু ক্ষেত্রেই প্রাথমিক ভাবে দরকার পড়বে একটাই জিনিসের। যা চাষ করতে চান, সেই শস্যের বীজ। জানেন নিশ্চয়ই, কৃষকেরা বীজধান সংরক্ষণ করে রাখেন, পরের বছর চাষ করার জন্য। কারণ বীজ না থাকলে শস্য উৎপাদন করাই সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদেরই অবহেলায়, বছরের পর বছর ধরে হারিয়ে যায় অনেক শস্যের বীজ। যার ফলে, এমন কোনও দিন আসতেই পারে পৃথিবীতে, যেদিন চাষ করার জন্য কোনও বীজ অবশিষ্টই থাকবে না। আর সেই আশঙ্কা থেকেই শস্যের বীজ সংরক্ষণ করার গুরুত্ব বুঝেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
আরও শুনুন: করোনাকালে সমুদ্রের তলায় জমছে কোটি কোটি মাস্ক, বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণ
বিশ শতকের গোড়ায় লেনিনগ্রাদ শহরে একটা বিশাল সিড ভল্ট গড়ে তোলেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। সোজা কথায়, বীজের ব্যাংক। সেখানে তাঁরা জমিয়েছিলেন বস্তা-বস্তা নানা প্রজাতির দানাশস্য। তার মধ্যে এমন অনেক দুষ্প্রাপ্য বীজও ছিল, যেসব শস্য নিয়মিত চাষ হয় না বলে হারিয়ে যেতে বসেছে। দুর্ভাগ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই শহরে হানা দিল হিটলারের ঘাতক বাহিনী। না, শহর দখল হল না বটে, কিন্তু পুরো শহরটাকে ঘেরাও করে রাখল তারা। সুতরাং, নেমে এল খাবারের আকাল। ৮৭২ দিন জারি ছিল এই অবরোধ, মারা গিয়েছিলেন ১৫ লক্ষ মানুষ! তবুও, অক্ষত ছিল এই সিড ভল্ট-টি। সেখানে জমানো শস্যে হাত দেননি কেউ।
বাকি অংশ শুনে নিন।