দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দিরগুলির মধ্যে সবথেকে উচ্চতম যে মন্দিরটি, সেটি তুঙ্গনাথের মন্দির। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, এই মন্দির ক্রমশই একদিকে হেলে পড়ছে। কিন্তু এর কারণ কী? খোঁজ করছে প্রশাসন। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রুদ্রপ্রয়াগে প্রায় ১২৮০০ ফুট উচ্চতায় আছে তুঙ্গনাথ মন্দির। শিব ভক্তদের কাছে এই মন্দির যেমন পবিত্র, তেমন পুরাতাত্ত্বিকদের কাছেও মন্দিরটির গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা অষ্টম শতকে নির্মিত এই মন্দিরটিই বিশ্বের উচ্চতম শিব মন্দির হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি সেই মন্দিরই হেলে যাচ্ছে বিশেষ এক দিকে। দেখা গিয়েছে, একটি নির্দিষ্ট দিকে প্রায় ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি বেঁকে যাচ্ছে মন্দিরের চূড়া। এ ছাড়া মন্দির চত্বরে যে ছোট ছোট স্থাপত্যগুলি আছে, সেগুলি বেঁকে গিয়েছে প্রায় ১০ ডিগ্রি। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় চিন্তিত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।
আরও শুনুন: চোর বাবাজির বোধোদয়! মন্দিরে চুরির ৯ বছর পরে কৃষ্ণের গয়না ফেরত, সঙ্গে জরিমানাও
ঘটনার কারণ খোঁজ করতে তৎপর হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত মাপজোক করে দেখা হচ্ছে, মন্দিরটি ঠিক কতটা হেলে পড়েছে। তা থেকেই অনুমান করা যাবে এর মূল কারণটি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যদি সাময়িক মেরামত করে এই সমস্যার সমাধান করা যায় তাহলে তো ভালই। অন্যথায় বড় রকমের পরিবর্তন জরুরি। সেইমতো মন্দির রক্ষার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই মারাত্মক ভূমিধ্বসের সাক্ষী থেকেছে উত্তরাখণ্ড। যোশিমঠের ঘটনা রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গোটা দেশে। এক্ষেত্রেও ভূমিধ্বসের দরুন মন্দিরের বেঁকে যাওয়া বা হেলে পড়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। আর তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে বড় মাপের মেরামতি ছাড়া মন্দির রক্ষা প্রায় অসম্ভব বলেই তাঁদের মত। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এএসআই। মন্দিরটিকে জাতীয় ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষিত ঘোষণা করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে মেরামতির কাজ দ্রুত শুরু করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন মন্দিরের গর্ভগৃহ বন্ধ থাকতে পারে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ ব্যাপারে স্থানীয়দের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।
আরও শুনুন: হবু বরকেও গ্রেপ্তার, আর কোন অসমসাহসী কাজে নজর কেড়েছিলেন অসমের ‘লেডি সিংহম’?
অষ্টম শতকে তৈরি হওয়ার দরুন, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের দিক থেকে স্বাভাবিক ভাবেই এই মন্দির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের উচ্চতম শিব মন্দির হওয়ার ফলে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভক্তদের আবেগও। ফলে তড়িঘড়ি কাজ শুরু না করে, মতামত নিয়েই পদক্ষেপ করার পক্ষপাতী প্রশাসন। বর্তমানে মন্দিরটির দেখভালের দায়িত্বে আছে বদ্রী-কেদার মন্দির কমিটি। এই সংস্থাকেও চিঠি দিয়ে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছে। তবে এখনও তাঁরা কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। সবার সম্মতিতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়াই এই মুহূর্তে লক্ষ্য। যে কোনও ভাবে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে রক্ষা করাই যে সকলের লক্ষ্য, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মন্দিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের তৎপরতায়।