নাস্তিকের সঙ্গে আস্তিকের দ্বন্দ্ব চিরকালের। তবে সেই দ্বন্দ্ব বা সংঘাত নিয়ে চায়ের কাপে তুফান উঠতেই পারে, চলতে পারে বিতর্কও। তবে মতপার্থক্যের জন্য চাকরি হারানো! ভাবলেও বোধহয় অবাক হতে হয়! তবে তেমনটাই ঘটেছে সম্প্রতি। নাস্তিক হওয়ায় চাকরি খোয়াতে হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। তবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন তাঁরাও। পাল্টা কী করলেন তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
গোটা বিশ্ব জুড়েই বিরোধী মতকে গ্রহণের ক্ষমতা কমছে দিনকে দিন। কমছে সহিষ্ণুতা। চারদিকে সাম্প্রদায়িক অশান্তির খবর তো অন্তত সেদিকেই ইঙ্গিত করে। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে একের পর এক সমালোচনা, বিতর্কের ঢেউ দেখেও সে কথাই মনে হয় বারবার। বিরোধী মতামত মানেই যে শত্রুতা নয়, সে কি কথা ভুলতে বসেছে আজকের সভ্য সমাজ? আর সে কারণেই বোধহয় একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নাস্তিক হওয়ার কারণে চাকরি খোয়াতে হল একটি সংস্থার দুই কর্মীকে। অফিসের প্রার্থনা সভায় উপস্থিত থাকতে নাকি রাজি ছিলেন না তাঁরা। আর সেই ‘অপরাধেই’ সংস্থার ওই দুই কর্মীকে বরখাস্ত করলেন কর্তৃপক্ষ।
আরও শুনুন: রেঁধে খেতে হত মানুষের মাংস, জঙ্গিদের হাতে বন্দি ধর্ষিতার নারকীয় অভিজ্ঞতায় হতবাক বিশ্ব
ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার একটি সংস্থায়। সেখানেই গ্রাহক পরিষেবা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন ম্যাকেনজি সন্ডারস নামে এক ব্যক্তি। জন ম্যাকগাহা নামে অন্যজন ছিলেন কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার। সংস্থার মালিক কট্টর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। ফলে কর্মীদের উপরে প্রার্থনাসভা নিয়ে বিশেষ চাপ থাকতই। ২০২০ সাল থেকেই এই প্রার্থনাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেখানে। অন্তত এক ঘণ্টা ধরে ওই প্রার্থনাপর্ব চলত। যেখানে বাইবেল পড়া ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি ওই প্রার্থনাসভা শুরু হওয়ার আগে কর্মীদের রোল কল করা হত বলেও জানা গিয়েছে। তা সেই সভায় উপস্থিত থাকতেই আপত্তি জানিয়ে বসেছিলেন ওই দুই কর্মী। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। প্রাথমিক ভাবে বেতন কমিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। তাতেও কাজ না হওয়ায় সংস্থার তরফে তাঁদের সরাসরি জানানো হয়, প্রার্থনাসভায় না থাকলে এখানে কাজ করা চলবে না। তবে নাস্তিক ওই দুই কর্মীর পক্ষে সংস্থার এমন নির্দেশিকা মানা সম্ভব ছিল না কিছুতেই। ফলে যা হওয়ার তাই হল। অল্পদিনের মধ্যেই চাকরি হারাতে হল দুই কর্মীকে।
আরও শুনুন: নীরজ চোপড়ার জয় থেকে দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন, ভবিষ্যদ্বাণী ‘ভারতের নস্ত্রাদামুস’-এর
তবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন ম্যাকেনজি ও জন। সংস্থার এই অমানবিক আচরণের বিরোধিতা করে সোজা আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। ইকুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি কমিশন (EEOC)-এ গিয়ে অভিযোগ ঠুকেছেন দু’জনে। দায়ের হয়েছে মামলাও।
বিষয়টির কড়া নিন্দা করেছেন EEOC-র রিজিওনাল অ্যাটর্নি মালিন্দা সি ডুগাস। জানিয়েছেন, এই ধরনের কাজ একেবারেই বেআইনি। ফেডারেল আইনে কড়া ভাবেই বলা রয়েছে, ধর্মবিশ্বাস আর কাজের মধ্যে কোনও বিরোধ থাকতে পারে না। ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের কারণে কোনও কর্মীকে বরখাস্ত করাটা কোনও সংস্থার পক্ষে অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আশা করা যাচ্ছে, আইনের পথে সুবিচার পেতে চলেছেন বরখাস্ত হওয়া ওই দুই কর্মী।