মনোবিদরা বলছেন, নিজের বা পরিচিত অন্য কারও ক্ষেত্রে যে মুহূর্তেই এমনটা বুঝতে পারা যাবে, তক্ষুনি খতিয়ে ভাবতে হবে বিষয়টা নিয়ে। হয়তো পরিচিত ‘ওয়ার্কোহলিক’ মানুষটি আসলে তীব্র মানসিক অবসাদের শিকার। তাই তাঁকে এড়িয়ে না গিয়ে, বরং এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বাতলে দেওয়া উচিৎ। কাজের প্রতি আসক্তি কাটাতে সবার আগে দরকার, নিজের জন্য নিজেই সীমানা বেঁধে দেওয়া। অর্থাৎ, এমন একটি সময় ধার্য করা, যা পেরিয়ে গেলে আর এক মুহূর্তও বসে থাকা চলবে না কাজ নিয়ে।
রোজকার জীবনে কিছু মানুষকে দেখে মনে হয়, অফিসের কাজের বাইরে তাঁদের বুঝি অন্য কোনও মাথাব্যথাই নেই! বাড়িতে থাকলেও একইভাবে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে থাকেন, এমনকি ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও তাঁদের দেখা মেলে না। অফিস কলিগরা আড়ালে আবডালে ‘ওয়ার্কোহলিক’(Workaholic) বলে বসে এমন মানুষদের। অথচ মনোবিদরা বলছেন, ‘ওয়ার্কোহলিক’(Workaholic) মানুষেরা নাকি আসলে একেবারেই কাজ করতে ভালোবাসেন না! বরং কাঁধে এসে পড়া দায়িত্বের বোঝা ফেলে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারলে বাঁচেন! তাহলে তাঁদের এমন অদ্ভুত আচরণের পিছনে আসল কারণ কী?
অনেকেই মনে করেন, সারাদিন কাজ নিয়ে ডুবে রয়েছে মানেই বোধহয় কাজ করতে পছন্দ করেন এই মানুষেরা। কাজপাগল লোকেদের গণ্যও করে থাকে সমাজ। আর তাই ‘ওয়ার্কোহলিক’(Workaholic) তকমাটিকে সামনে বর্মের মতো ধরে, রোজকার ক্লান্তি-হতাশা লুকানোর চেষ্টা করেন আপাত কাজপাগলেরা! মনোবিদরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে কাঁধে, যা থেকে চেয়েও মানুষ মুক্তি পায় না। কখনও বাড়ির পরিবেশ এতটাই কষ্টকর হয়ে ওঠে মানুষের কাছে, যে, বাড়ি ফেরার ইচ্ছেটুকুই চলে যায় তাঁর মন থেকে। হয়তো সত্যি করেই সব ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে তাঁদের। কিন্তু সিনেমা-সিরিজে যতই দেখাক, বাস্তবে কি আর সমস্ত দায়-দায়িত্ব পিছনে ফেলে মানুষ চলে যেতে পারে?
অতএব, উপায় একটিই। কাজের মধ্যে নিজেকে সবদিক থেকে ব্যস্ত করে ফেলা! এতে অন্যেরা কিছুটা হলেও এড়িয়ে চলবে তাঁকে, নিজের মতো থাকতে দেবে। অন্যদিকে, সে ব্যক্তি নিজেও নানান কাজের চাপে প্রতিদিনকার হতাশা বিরক্তির থেকে মুক্তি খুঁজে পাবে। হয়তো মন দিয়ে কাজ করলে, বসের প্রশংসা কিংবা প্রোমোশনও জুটে যেতে পারে! তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় না। বরং দেখা যায় যে সারাদিন ধরে কাজ করে যাওয়া মানুষটার কাজে সৃজনশীলতার মান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সবার থেকে লুকিয়ে রাখলেও মনের আসল রূপ কি নিজের থেকে লুকাতে পারে মানুষ? তাই তো মাঝে মধ্যে খবরে উঠে আসে, উচ্চপদ কর্মরত আধিকারিকের আত্মহননের ঘটনা! কাজের বোঝা সাময়িক ব্যস্ততা দিলেও পুরোপুরি শান্তি তো আর দিতে পারে না কখনও!
মনোবিদরা বলছেন, নিজের বা পরিচিত অন্য কারও ক্ষেত্রে যে মুহূর্তেই এমনটা বুঝতে পারা যাবে, তক্ষুনি খতিয়ে ভাবতে হবে বিষয়টা নিয়ে। বুঝতে হবে যে, পরিচিত ‘ওয়ার্কোহলিক’(Workaholic) মানুষটি আসলে তীব্র মানসিক অবসাদের শিকার। তাই তাঁকে এড়িয়ে না গিয়ে, বরং এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় বাতলে দেওয়া উচিৎ। কাজের প্রতি আসক্তি কাটাতে সবার আগে দরকার, নিজের জন্য নিজেই কোনও সীমানা বেঁধে দেওয়া। অর্থাৎ, এমন একটি সময় ধার্য করা, যা পেরিয়ে গেলে আর এক মুহূর্তও বসে থাকা চলবে না কাজ নিয়ে। পাশাপাশিই, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। যোগব্যায়াম করা যেতে পারে। এছাড়া, যেকোনও সৃজনশীল কাজ, যেমন ছবি আঁকা, গান গাওয়া অথবা রান্নার সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে নিজেকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে, এক আসক্তি কিন্তু কখনওই অন্য আসক্তি কাটানোর উপায় হতে পারে না।
তবে এ সবেও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয়, তবে অবশ্যই মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। আমরা সাধারণত শরীরের স্বাস্থ্য নিয়ে যতটুকু মাথা ঘামাই, মন নিয়ে তার অর্ধেকও ঘামাই না। বরং ডিপ্রেশন কিংবা সুইসাইডাল থট-এর মতো গুরুগম্ভীর বিষয়কেও অত্যন্ত হালকা ভাবে নিয়ে থাকি। তেমনটা যে উচিৎ নয়, তা অবশ্য কিছুক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় চোখ বোলালেই বুঝতে পারা যায়। মানসিক অবসাদের যা কিছু বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় মানুষের মধ্যে, কাজের নেশা(Workaholic) বা ‘ওয়ার্কোহলিজম্’-ও তার মধ্যে অন্যতম। এমনটা রুখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হোক আজই।