সম্প্রতি বারেবারেই খবরের শিরোনামে দেখা গিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের নাম। জানেন কি, কেন এমন নাম এই সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডটির? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাজ্য সরকারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবেই চিহ্নিত এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতাল। এখানকার উডবার্ন ওয়ার্ডটিতে চিকিৎসা মেলে বিশিষ্টজনদের। কিন্তু কেন এহেন নামকরণ করা হয়েছিল এই ওয়ার্ডটির? আসছি সে কথাতেই।
আরও শুনুন: বাংলা মানে শুধু মিষ্টি দই-রসগোল্লা নয়, বাংলাকে চেনা যায় আত্মসম্মানের গরিমাতেই
শহর কলকাতার পুরনো ইতিহাস জানায়, এসএসকেএম তথা শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতালে এই বিশেষ ওয়ার্ডটির নামকরণ করা হয়েছিল একজন বিশেষ মানুষের নাম অনুসারেই। তিনি স্যার জন উডবার্ন।
কে ছিলেন তিনি? স্যার জন উডবার্ন জাতিতে ব্রিটিশ হলেও তাঁর জন্ম এই বাংলার ব্যারাকপুরে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি এবং এডিনবরা ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষালাভের পর ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন তিনি। সেটা ১৮৬৩ সাল। জানা যায়, কাজে রীতিমতো দক্ষতার পরিচয় দেন উডবার্ন, ফলে এ দেশে কার্যকরী মন্ত্রিসভা তথা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য পর্যন্ত হয়েছিলেন তিনি। আর ১৮৯৮ সালে সরাসরি সেকালের অবিভক্ত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হয়ে বসলেন জন উডবার্ন। ১৯০২ সালে তাঁর মৃত্যু হওয়ার আগে পর্যন্ত এই পদেই ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে ‘লন্ডন টাইমস’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত শোকবার্তায় বলা হয়েছিল, স্যার জন উডবার্নের মতো জনপ্রিয় শাসক বাংলা এর আগে পায়নি। কেবল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডই নয়, কলকাতার সংস্কৃতিজগতের সঙ্গেও জড়িয়ে ছিলেন স্যার জন উডবার্ন। ১৯০০ এবং ১৯০১ সাল, এই দুই বছর এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: ‘লাঞ্ছনা’ সত্ত্বেও সুভাষকে ভোলেননি ইংরেজ অধ্যাপক ওটেন সাহেব, লিখেছিলেন কবিতাও
উডবার্ন যখন বাংলার শাসনভার হাতে নিলেন, সেই সময়ে কলকাতা জুড়ে থাবা বসিয়েছে প্লেগ মহামারী। আক্রান্ত মানুষদের সেবা করার জন্য পথে নেমেছিলেন ভগিনী নিবেদিতা, চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ কর-এর মতো মানুষেরা। এই ভয়ংকর মহামারী প্রতিরোধে স্মরণীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন উডবার্ন। বস্তুত নিজের শাসনকালে কারা ও স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল বা পিজির প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। আর সেই কারণেই, স্যার জন উডবার্নের নামেই তাদের বিশেষ ওয়ার্ডের নামকরণ করেছে এই হাসপাতাল। আর এভাবেই সেই জনদরদী শাসককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে এই বাংলা।