মহিলা কর্মীরা ঋতুকালে পোশাকের সঙ্গে একটা রেড স্টিকার লাগিয়ে রাখুন। এমনটাই দাবি এক কাফে মালিকের। তাতে নাকি সেই কর্মীদের আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যাবে। কিন্তু ঋতুকালীন সময়ে মহিলা কর্মীদের এভাবে পৃথক করার দরকারটাই বা পড়ল কেন? কী জবাব কাফে মালিকের? আসুন, শুনে নিই।
রেডিও শো-তে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন জনৈক কাফে-মালিক। প্রথম যখন কথাটা বললেন, সঞ্চালকরা প্রায় বিশ্বাসই করতে পারছিলেন। একজন যারপরনাই অবাক হয়ে যান। অন্যজন, নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি ঠিকই শুনেছেন। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। একটু আগেই কাফে-কর্ণধার বলে ফেলেছেন একখানা অদ্ভুত কথা। তাঁর দাবি হল, ঋতুকালীন সময়ে মহিলা কর্মীরা একটি রেড স্টিকার পরুন। তাতেই তাঁদের আলাদা করে চিহ্নিত করা যাবে।
আরও শুনুন: মেয়ের জন্মদিনে বিলি ১ লক্ষ ফুচকা, ব্যক্তির উদ্যোগকে কুর্নিশ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর
সঞ্চালকদের মতোই বিস্মিত হয়েছেন বাকি সকলেই। এরকম একটা প্রস্তাবের অর্থই বা কী? কেনই বা কাফে-মালিকের মনে হল যে, ঋতুকালে মহিলাদের আলাদা করে চিহ্নিত করতে হবে। এর একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দিইয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ওই কাফে-কর্ণধার অ্যান্টনি। তাঁর বক্তব্য, ঋতুকালে মহিলাদের শারীরিক কিছু অসুবিধার পাশাপাশি, মানসিক নানা পরিবর্তনও হয়। হরমোনঘটিত কারণেই প্রভাব পড়ে তাঁদের মেজাজ-মর্জিতে। অনেকেরই এই সময়টা মুড সুইং হয়। শারীরিক অসুবিধার সঙ্গে মোকাবিলা করা গেলেও, মনের জগতের এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে ঝুঝে ওঠা সবসময় সম্ভব হয় না। এই সময় তাঁদের আলাদা একটু স্পেস দরকার হয়। যা সাধারণ ভাবে কাজের জগতে দেওয়া সম্ভব হয় না। বা সহকর্মীরা এ বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দেন না। অ্যান্টনি অবশ্য এ-ও বলেছেন, ঋতুকালে একজন মহিলাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা কোনও পুরুষের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু পুরুষ সহকর্মী অন্তত বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে পারেন, যদি তিনি জানেন যে, তাঁর পাশের মহিলা সহকর্মী এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাঁর প্রস্তাব, ঋতুকালে মহিলা কর্মীরা একটি রেড স্টিকার পরে নিন। তাহলে তাঁর প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খানিকটা সচেতন হতে পারেন অন্যরা। সহকর্মী এবং কাফে-তে যাঁরা আসছেন, তাঁরা একযোগে সচেতন হবেন বলেই আশা করেছেন কাফে-কর্ণধার।
আরও শুনুন: মহিলাদের ঋতুকালীন সামগ্রী পাওয়া যাবে বিনামূল্যেই, নজির স্কটল্যান্ডের
নিজের প্রস্তাবটি অ্যান্টনির কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য বলে মনে হলেও, অন্যান্যরা এ বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দিইয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, ঋতুকালে মহিলাদের এরকম আলাদা করে রাখা বেশ অবমাননাকর একটি বিষয়। সেই পুরনো যুগে মা-ঠাকুমারা যেমন ঋতুকালে মহিলাদের নানা কাজ থেকে বিরত করতেন, অনেকটা তারই ছোঁয়া আছে এই ভাবনায়। যেখানে আধুনিক পৃথিবী ট্যাবু ভেঙে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা, সেখানে এমন পৃথকীকরণের কী মানে? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মহিলারাও ঋতুকালীন অসুবিধা মোকাবিলা করে কর্মক্ষেত্রে দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে আবার ওই একই বিষয়ের জন্য, তাঁদের পৃথক করে রাখা হরেদরে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যকে ডেকে আনবে বলেই মত অনেকের। ওই রেডিও শোয়ের সঞ্চালকদের একজন আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছেন। একজন মহিলা কর্মী কেনই বা তাঁর মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বা ঋতুচক্রের কথা অন্যদের বলবেন? প্রশ্ন তাঁর। এ-প্রশ্ন অনেকেরই। যদিও কাফে-কর্ণধার সে সব নিয়ে আর টুঁ শব্দটিও করেননি।