বিচ্ছেদ মানেই বিরহ, যন্ত্রণা। দীর্ঘদিন কারও সঙ্গে কাটানোর অভ্যেস সহজে ভোলা কঠিন। তাই বিবাহ-বিচ্ছেদ যতই সহজ ভাবে নেওয়া হোক, তা মোটেও উদযাপন করার মতো বিষয় নয়। এমনটা মনে করেন অনেকেই। ব্যতিক্রম এই মুসলিম প্রদেশের বাসিন্দারা। বিয়ের থেকেও জাঁকজমক সহকারে বিচ্ছেদ উদযাপন করেন তাঁরা। নেপথ্যে কী কারণ? আসুন শুনে নিই।
বিয়ের ইতি মানেই তিক্ততা কিংবা ঝগড়াঝাঁটি! মোটেই না। সেই ধরাবাঁধা গত ভেঙে একেবারে অন্যরকম রেওয়াজ পালন করে এই দেশের মানুষজন। বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেন তাঁরা। আর সেই আয়োজন বিয়ের অনুষ্ঠানকেও হার মানাতে পারে।
আরও শুনুন: খোরপোশ না দিলে জেল, ঝামেলা এড়াতে খুচরোতে ৫৫ হাজার দিলেন স্বামী, হতবাক বিচারক
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার এক প্রদেশ, মওরিটানিয়া। অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলিম। তাঁদের সমাজে চালু রয়েছে এক অদ্ভুত রেওয়াজ। এলাকায় কারও বিবাহবিচ্ছেদ হলে রীতিমতো উৎসবের আমাজে মেতে ওঠেন তাঁরা। মূলত যে মহিলার ডিভোর্স হয়েছে তাঁকে ঘিরে আয়োজন করা হয় উৎসবের। যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই বিবাহবিচ্ছেদের পর বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় মহিলাদের সেখানে এই প্রদেশ যারপরনায় ব্যতিক্রম। শুধুমাত্র বিচ্ছেদ উদযাপনের জন্য নয়, বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলাদের জন্যও আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে এই সমাজ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদের পর সমাজের নানা কটুক্তির শিকার হন মহিলারা। যোগ্যতা থাকলেও তাঁদের কাজ দেওয়ায় আপত্তি জানান অনেকেই। অন্যায়ভাবে তাঁদের আলাদা করে দেওয়ার ঘটনাও প্রায়শই সামনে আসে। তাই বিভিন্ন ভাবে মানসিক সমস্যা গ্রাস করে তাঁদের। কিন্তু এই প্রদেশে ঘটে ঠিক উলটোটা। বিচ্ছেদের পর সেই মহিলার যেন কোনওরকম মানসিক অবসাদ না হয় তার জন্য উৎসবের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। আর সেই আয়োজন বিয়ের থেকেও ব্যাপক আকারেই করা হয়। স্থানীয় বিশ্বাস, একজন মহিলা বাধ্য হলেই সম্পর্ক শেষ করার কথা ভাবেন। তাই সেক্ষেত্রে তাঁর পাশে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরী। এই সমাজে, বিয়ের জন্য কুমারী মেয়েদের তুলনায় বিবাহ-বিচ্ছিন্না মহিলার চাহিদা বেশি। মনে করা হয়, পুরনো সম্পর্কের অভিজ্ঞতার জোরে নতুন করে সংসার গড়তে তাঁরা বিশেষ পারদর্শী হবেন। তাই বিচ্ছেদ হলেই সেই মহিলাকে ঘিরে শুরু হয় উৎসব। সেখানে তিনি যেন হাসিমুখে থাকতে পারেন সে ব্যবস্থাই করেন অন্যান্যরা। আয়োজন হয় দেখার মতো। খাওয়াদাওয়া, হৈ হুল্লোড় কী হয় না সেখানে!
আরও শুনুন: ডিভোর্স পার্টিতে কাজ পেয়েছিলেন বেয়ারার, শেষমেশ তরুণীকে বিয়েই করে ফেললেন যুবক
অন্যদিকে, বিয়ে ভাঙলে বেজায় সমস্যায় পড়েন এলাকার পুরুষরা। সকলেই মনে করেন, তাঁর অক্ষমতার কারণেই সম্পর্কটা টেকেনি। তাই নতুন করে সেই পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চান না কেউই। তাই বিচ্ছেদ উদযাপনে ডাক পান মহিলারাই। সেখানে তাঁদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। বাহবা দেওয়া হয়, পুরনো সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। মহিলার মানসিক অবস্থার কথাও খেয়াল রাখার চেষ্টা করেন সকলেই। বলাই বাহুল্য, বিশ্বব্যাপী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই নিয়ম। সমাজে মহিলাদের গুরুত্ব ঠিক কতটা, তা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চান মওরিটিনিয়া প্রদেশের বাসিন্দারা। তাই সারা বিশ্বের সামনে তাঁরা ব্যতিক্রম। বিচ্ছেদের মতো ঘটনাকে উদযাপন করার জন্য তো বটেই, সেইসঙ্গে বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলাদের সম্মান দেওয়ার জন্যও।