দীর্ঘদিন সংবাদের শিরোনাম দখল করেছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। প্রশংসা, বিতর্ক সবমিলিয়ে সিনেমাটির ব্যবসাও বেশ ভালোই হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে সে রাজ্যের অন্য এক ছবি। যেখানে সিনেমার গল্প এতটুকু ধরা পড়েনি। বরং ফুটে উঠেছে মানবিকতার স্পষ্ট উদাহরণ। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নিই।
বাড়িতে সদস্য ৪জন। অথচ রান্না করা হয় ৬ বা ৭জনের মতো। এককালে এই রেওয়াজে বেশিরভাগ পরিবারেই ছিল। মনে করা হতো, হঠাৎ কোনও অতিথি এলে তাঁকে যেন অভুক্ত না থাকতে হয়। কিন্তু আজকালকার দিনে সে আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বিনা আমন্ত্রণে বা না জানিয়ে কেউ কারও বাড়িতে হাজির হন না। আর এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। তবু কেরলের অনেক বাড়িতেই এই অতিরিক্ত রান্না করার চল এখনও রয়েছে।
আরও শুনুন: ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখিয়েছিলেন খোদ সাধ্বী প্রজ্ঞা, মুসলিম প্রেমিকের সঙ্গে চম্পট সেই তরুণীর
তবে, বাড়িতে অতিথি আসতে পারেন এই আশঙ্কা থেকে তাঁরা অতিরিক্ত রান্না করেন না। বরং ওই খাবার কার পেটে যাবে, সেটুকুও জানতে পারেন না ওই মহিলারা। স্রেফ মানুষের উপকারে লাগবে এই ভাবনা থেকেই এমনটা করেন তাঁরা। আসলে এঁরা সকলেই ‘হৃথায়াপূর্ভম’ নামে এক ক্যাম্পেনের অংশ। ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল এই প্রকল্প। মূল উদ্দেশ্য অভুক্তদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া। প্রথমে মাত্র ৩০০-৪০০ জনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। ধীরে ধীরে এর সঙ্গে যুক্ত হন অনেকেই। যার জেরে বর্তমানে ৪০হাজার অভুক্তের পেটে খাবার জোটে। আসলে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা প্রতিদিন কিছুটা অতিরিক্ত খাবার রান্না করেন। কেউ তা বাড়িতে জানিয়ে করেন, আবার কেউ সকলের অলক্ষ্যে। তারপর নির্দিষ্ট সময় সেই অতিরিক্ত খাবার দুজন যুবক এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এভাবে সকলের রান্না করা অতিরিক্ত খাবার সংগ্রহ হয়ে গেলে এক জায়গায় জরো করেন তাঁরা। সেখানে আরও কয়েকজন যুবক যুবতী আগে থেকেই মজুত থাকেন। সকলে মিলে ওই খাবার নির্দিষ্ট পরিমাণে প্যাকেট করেন। তারপর শুরু হয় প্যাকেটগুলো বিলি করার কাজ। হাসপাতাল, ষ্টেশন চত্বর, মন্দিরের সংলগ্ন এলাকা থেকে আরম্ভ করে বিভিন জায়গায় হাজির হন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে অভুক্ত মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তাঁদের মধ্যেই খারারের প্যাকেট বিলি করা হয়। কার রান্না করা খাবার কার পেটে যাচ্ছে তা বোঝার উপায় থাকে না। স্রেফ সকলেই যে খেতে পাচ্ছেন এটা নিশ্চিত হয়।
আরও শুনুন: সাহসের নাম ‘দ্য কেরালা স্টোরি’! ছবি দেখে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ মডেলের
আগামীদিনে এই প্রকল্পকে আরও বড় রূপ দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে ওই যুবদলের। তবে তাঁদের এই উদ্যোগে সাধারণ গৃহিণীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। নিঃস্বার্থ ভাবে তাঁরা রোজ রান্না করা খাবার তুলে দেন ওই যুবকদের হাতে। তাই এই প্রকল্প তাঁদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতনা বলেই মনে করেন ওই যুবক যুবতীরা। সরকারের তরফেও তাঁদের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। শুধু মানবিকতাই নয়, এর জেরে অদ্ভুত এক সমন্বয়ের বার্তাও ছড়িয়ে পড়ে সমাজে। তাই সকলেই এই প্রকল্পের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।