নিজের লেখা প্রবন্ধই শেষমেশ ধরিয়ে দিল লেখিকাকে। স্বামী খুনের মামলায় সেই ছাপার অক্ষরই যে হয়ে উঠবে অপরাধীর সবচেয়ে বড় জবানবন্দী, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেননি কেউই। কী করে শেষমেশ ধরা পড়ল অপরাধী? আসুন, শুনে নিই সেই গল্পই।
কথায় বলে গল্প হলেও সত্যি। তবে ছাপার অক্ষরে লিখে ফেলা কয়েকটা শব্দ যে এমন অক্ষরে অক্ষরে ফলে যাবে তাঁর জীবনে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এই লেখিকা। মানুষ গল্পে, উপন্যাসে তো কত কিছুই লেখে। কিন্তু সেই লেখাই হয়ে উঠেছে অপরাধের জবানবন্দি, এমনটা বোধহয় খুব বেশি দেখা যায়না। তবে মার্কিন এই লেখিকার জীবন উল্টেপাল্টে দিয়েছে তাঁরই লেখা একটি প্রবন্ধ।
কীভাবে? সেটা জানতে গেলে তো গোটা গল্পটা গোড়া থেকে শুরু করতে হয়। না, এ মোটেই শুধু গল্প নয়। এ ঘটনা আক্ষরিক অর্থেই গল্প হলেও সত্যি।
আমেরিকার ওরেগনের বাসিন্দা ন্যান্সি ক্র্যাম্পটন ব্রফি। ৭১ বছরের ন্যান্সি পেশায় লেখিকা। ২০১১ সালে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন ন্যান্সি, যার নাম ছিল ‘হাউ টু মার্ডার ইওর হাসব্যান্ড’। অর্থাৎ কিনা কীভাবে স্বামীকে খুন করবেন, তার সহজ উপায়। হ্যাঁ, ন্যান্সির লেখা প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ছিল এমনই। সেখানে নানা রকম পন্থা ও খুনের মোটিফের কথাও লিখেছিলেন তিনি।
তবে ঘটনাচক্রে ২০১৮ সালে ন্যান্সি ধরা পড়লেন নিজের স্বামীকে খুনের অপরাধে। সে বছর জুনে খুন হন ড্যানিয়েল ব্রফি নামে ওই ভদ্রলোক। পেশায় তিনি ছিলেন একজন শেফ। তাঁর কর্মস্থলের রান্নাঘরেই রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর বুকে ও পিঠে গুলির চিহ্ন ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পরে ফেসবুকে শোকবিহ্বল পোস্টও করেন ন্যান্সি।
২০১৮ সালেরই সেপ্টেম্বরে ন্যান্সিকে তাঁর স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে সময় মামলা শুরু হলেও দোষ স্বীকার করেননি ওই লেখিকা। এর মধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় দু-বছর বন্ধ ছিল ন্যান্সির বিচার প্রক্রিয়া।
করোনার প্রকোপ কমে আসতেই খুনের মামলাটি ফের ওঠে আদালতে। সেখানেই ন্যান্সির জবানবন্দি হিসেবে উঠে আসে তাঁরই লেখা প্রবন্ধের কথা। এর আগেই ‘দ্য রং লাভার’ ও ‘দ্য রং হাসব্যান্ড’ বলে দুটি বই লিখেছিলেন ন্যান্সি। বিবাদী পক্ষের উকিল প্রমাণ হিসেবে আদালতে হাজির করেন ওই দুটি বইও। অবশেষে জেরার মুখে ন্যান্সি স্বীকার করে নিয়েছেন, অন্য কেউ নয়, তাঁর স্বামীকে খুনের পিছনে ছিল তাঁরই হাত। ১৫ লক্ষ ডলারের বেশি অর্থের জীবনবিমা আত্মস্যাৎ করার জন্যই এই কাজ করেন ওই লেখিকা। স্বামীকে খুন ও আগ্নেয়াস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের জন্য দোষীসাব্যস্ত করা হয়েছে ন্যান্সিকে। আপাতত শ্রীঘরেই দিন কাটছে তাঁর। তবে নিজের লেখা শব্দরাই যে এভাবে তাঁকে গারদে পাঠাতে সাহায্য করবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি মার্কিন ওই লেখিকা।