প্রেমের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলার হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন একটি আংটি। কিন্তু মুনি দুর্বাসার অভিশাপে সেই শকুন্তলার কথা বেমালুম ভুলে গেলেন রাজা দুষ্মন্ত নিজেই। তার পর কীভাবে বহু হাত ঘুরে দুষ্মন্তের স্মৃতিতে ফের বেঁচে উঠেছিলেন শকুন্তলা, সে কথা তো সকলেরই জানা। তবে কেবল পুরাণ কিংবা রূপকথাতেই নয়। এমন আশ্চর্য ঘটনা ঘটে বাস্তবেও। আসুন, তবে শুনে নেওয়া যাক এক আশ্চর্য আংটির গল্প, যা কখনও হারায় না। বারবার ফিরে আসে তাঁর মালিকের কাছে। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু নিজের জীবনের এমন গল্পই তো শোনালেন এক মহিলা। কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
না, এ কোনও রূপকথা নয় মোটেও। নয় কোনও রোমহর্ষক থ্রিলারও। একটা একঘেয়ে গল্পই তিনি ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে তা যে নেটনাগরিকদের এতটা মনে ধরবে, তা ভাবতেও পারেননি এই মহিলা। এ গল্প তাঁরই। না, ঠিক তাঁর বললে অবশ্য ভুল বলা হবে। এ গল্প তাঁর আংটির। না, কোনও যে সে আংটি। এ আংটির রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা। বশীকরণ বা অন্য কোনও ভাগ্য ফেরানোর ক্ষমতা নেই এ আংটির। বরং রয়েছে নিজে ফিরে আসার আশ্চর্য ক্ষমতা।
সেই আংটির সঙ্গে যেন আশ্চর্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে রয়েছেন এই মহিলা। সেই চোদ্দ বছর বয়স থেকে। যে গল্প শুনলে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সেই গল্পই তিনি শোনাতে চেয়েছিলেন তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের। আর সেই গল্প শোনাতে শোনাতে যে কখন ফিরে চলে গেছেন সেই কিশোরী বেলায় বুঝতেই পারেননি। তা কথা না বাড়িয়ে বরং সরাসরি আসা যাক গল্পেই।
আরও শুনুন: হানিমুনে গিয়ে মিয়া খলিফাকে চিনে ফেললেন স্বামী, রেগে আগুন স্ত্রী, তারপর…
তখন সবে চোদ্দ। এ আংটি তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন তাঁরই এক বন্ধু। চাঁদ আর তারা খোদাই করা সেই সুন্দর আংটিটাকে বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবেই রেখে দিয়েছিলেন মহিলা। পরে অবশ্য আংটির দাম শুনে চমকে ওঠেন তিনি। হবে নাই বা কেন! সে আংটি যে ৯ ক্যারাট সোনা দিয়ে তৈরি। রীতিমতো একমাসের বেতন খরচ করে বান্ধবীকে উপহার দিয়েছিল সেই তরুণ। কিন্তু বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে অত দামী উপহার কীভাবে রাখতেন বছর চোদ্দর কিশোরী! তাই তৎক্ষনাৎ আংটিটি তিনি ফেরত দিয়ে আসেন ওই বন্ধুকে। কিন্তু উপহারের বিচার কবেই বা আর দাম দিয়ে হয়েছে বলুন তো! তাই প্রত্যাখ্যান পেয়ে রাগে-দুঃখে-অভিমানে আংটিটি সটান আস্তাবলে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন তরুণ। সেই তরুণ আবার ছিলেন দুর্দান্ত ফাস্টবোলার। ফলের হাতের টিপও ছিল মোক্ষম। ফলে আংটিটির যে কোথায় ঠাঁই হয়েছিল, তা ঠাহর করা কঠিন নয়। কিন্তু আগেই বলেছি, এই গল্প আসলে সেই আশ্চর্য আংটির, যা কখনও হারায় না।
তার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ কুড়ি বছর। ততদিনে আংটির কথা ভুলেছেন বছর চৌত্রিশের ওই যুবতী। হঠাৎই সেদিনের সেই বন্ধুটির বোনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তাঁর। মেয়েটির হাতে থাকা আংটিটিকেও চিনতে ভুল হয়নি সেদিন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, পরের দিনই আস্তাবলে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছিল আংটিটি। এবং সবাইকে অবাক করে খুঁজেও পাওয়া যায় সেটি। তখন থেকেই সেটি নিজের হাতেই পরে ছিলেন তরুণের বোন। তবে সেই সাক্ষাতের পরে আংটিটি আর নিজের কাছে রাখেননি তিনি। বরং ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আসল মালকিনকেই।
আরও শুনুন: পাত্রের গোঁফ-দাড়ি থাকলে বিয়েই বাতিল, আজব নিয়ম রাজস্থানের গ্রামে
অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা জেনি ফ্রিকলিংটন জোনস। এ গল্পের বক্তা তিনিই। সম্প্রতি টুইটারে তিনি ভাগ করে নিয়েছেন এই গল্প। জানিয়েছেন, তার পর থেকে এই আংটিটি অনেকবার কাছছাড়া হয়েছে তাঁর। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রতিবারই কোনও না কোনও ভাবে সেটি ফিরে এসেছে তাঁর হাতেই। কতবার তো নিজেই যেচে দিয়ে দিয়েছেন অনেককে। তবে এ আংটি কখনও ছেড়ে যায়নি জেনিকে।
বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে শোনা যাক আর একটি ঘটনার কথা। একবার বব নামে এক লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। বেশ কিছুদিন একসঙ্গে কাটানোর পরে অন্য দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। অনেক দূরের পথ, তার উপর বিমানসফর। ভয় কাটাতে জেনি জোর করেই তাঁর হাতে ধরিয়ে দিলেন আংটিখানা। কিছু দিন পরে লেখকের চিঠি এল তাঁর কাছে। আংটিটি ফেরাতে চাইলেন তিনি। পাঠালেনও, কিন্তু পথে ফের খোয়া গেল আংটিটি।
ভাবছেন নিশ্চয়ই, তার পর কী হল। টুইট করে জেনি জানিয়েছেন, এবারও সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি। হারায়নি সেই আংটি। পরে কুরিয়ার অফিস থেকে সেই আংটিটি সংগ্রহ করেন তিনি। এই শেষ নয়। এর পরেও কত বার কত জনকে সেই আংটি তিনি দিয়েছেন। আর বারবারই নানা পথ ঘুরে ফের জেনির হাতেই ফিরে এসেছে সেই আশ্চর্য আংটি। আর সেই আশ্চর্য আংটির আশ্চর্য ভাবে বারবার ফিরে আসার সেই গল্পেই এবার মজেছে নেটদুনিয়া।