মাত্র এক বছর সময়। তার মধ্যেই একটি দুটি নয়, মোট ৫৫টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন এক মহিলা। অথচ তাঁর নিজের পায়ে দাঁড়ানোরই ক্ষমতা নেই। হুইলচেয়ারে ভর করেই তাঁর চলাফেরা। তবু মনের জোরে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন তিনি। যার জন্য তাঁর নাম উঠেছে গিনেস বুকেও। আসুন শুনে নেওয়া যাক, তাঁর গল্প।
কথায় বলে, পায়ের তলায় সর্ষে। কিন্তু পা-ই অকেজো হয়ে গিয়েছে যার? তাতেও পরোয়া নেই, মন যে আগের মতোই তরতাজা। আর সেই মনের জোরেই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন এই মহিলা। সাত বছর বয়সেই যাঁর চিরসঙ্গী হয়েছিল হুইলচেয়ার। কিন্তু ততদিনে মাথায় ঢুকে গিয়েছে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর ভূত। সেই টানেই হারিয়ে দিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে। হুইলচেয়ার-বন্দি হয়েও এক বছরে পৃথিবীর ৫৫টি দেশ ঘুরে ফেলেছেন তিনি! আর সেই কাণ্ডের দৌলতেই গিনেস বুকে নাম উঠেছে তাঁর।
আরও শুনুন: নেই দুটি হাতই, বলিউডি গানে প্রাণ খুলে নাচ তরুণীর, মুগ্ধ নেটিজেনরা
রেনি ব্রুন্স নামের এই মহিলা বর্তমানে জর্জিয়ার বাসিন্দা। কিন্তু ছোট থেকেই অন্য দেশে ঘুরে বেড়ানো তাঁর নেশা। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্ক। সেই থেকেই ঠিক করে নিয়েছিলেন পৃথিবীর সবকটা দেশ ঘুরে দেখবেন। কিন্তু কয়েকবছরের মধ্যেই তাঁর শরীরে ধরা পড়ে এক ভয়ংকর অসুখ। যার ফলে সাত বছর বয়সেই হুইলচেয়ার ব্যবহার করা শুরু করতে হয় তাঁকে। তখনও আশা ছিল, একদিন ঠিক এই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশা পূরণ হয়নি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ধরা পড়ে, ডায়াস্ট্রফিক ডোয়ার্ফিজম নামে এক রোগে আক্রান্ত তিনি। যার ফলে সারাজীবনের জন্য তাঁর চলাফেরার ভরসা হুইলচেয়ার। কিন্তু এত কিছুর পরেও দমে যাননি রেনি। ঠিক করেন কয়েকবছর কাজ করে টাকা জমিয়ে তারপর বিদেশ ভ্রমণে বেরোবেন। সেই মতো একটি বিমা সংস্থায় কাজ শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে জমিয়েও ফেলেন টাকা।
আরও শুনুন: ছুটিতে সহকর্মীকে বিরক্ত করলেই ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, কেন এমন নিয়ম জারি সংস্থার?
ব্যস, আর কী চাই! ২০২২ সালে শুরু করেন যাত্রা। ঠিক করেছিলেন এক বছরে যতগুলো দেশ ঘোরা সম্ভব তিনি ঘুরে দেখবেন। বছরের শেষে গিয়ে দেখেন মোট ৫৫টি দেশ তিনি এই একবছরে ঘুরে ফেলেছেন। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন তিনি। বিশ্বের বড় বড় সব দেশ ইতিমধ্যেই ঘোরা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এতদিনে মোট ১১৭টি দেশ ঘুরেছেন তিনি। পেরু, কম্বোডিয়া, তুরস্ক, কেনিয়া, কী নেই সেই তালিকায়। আর এবার মাত্র এক বছরের মধ্যে ৫৫টি দেশ ঘোরার দরুন বিশ্বরেকর্ডের খাতায় নাম উঠেছে তাঁর। উচ্ছ্বসিত হয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখে সেই শংসাপত্রের ছবি তিনি প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখার পর প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। তাঁর এই অদম্য মনের জোরকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।