কে না জানে, মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাসা করা মানা! আর চিরাচরিত সেই রীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশ্নকর্তাদের এমন তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণটি এসে বিঁধেছিল চাকরিপ্রার্থীর বুকে। তা সত্ত্বেও বুকে পাথর চেপে উত্তর দিয়েছিলেন মহিলা। চাকরি পাওয়ার স্বার্থে মানুষ কত কী-ই তো করে! তাই বাধ্য হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন তিনিও। তবে এত কিছুর পরেও মিলল না চাকরি। বেজায় চটে গিয়ে সংস্থার বিরুদ্ধেই মামলা করে বসলেন তিনি। কী হল তারপর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চাকরি পাওয়ার পথে বড় এক পরিখার নাম ইন্টারভিউ। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও মুখোমুখি ইন্টারভিউ-তে উত্তীর্ণ হতে পারেন না অনেকেই। কারণ শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যা হলেই হয় না, ইন্টারভিউ দিতে গেলে চাই যথেষ্ট সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা। পাশাপাশি পরীক্ষার্থীর আচারআচরণ, উপস্থিত বুদ্ধি সব কিছুই খুঁটিয়ে দেখেন প্রশ্নকর্তারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউ চলাকালীন নানান প্রশ্নের জালে পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করেন পরীক্ষকেরা। স্নায়ু স্থির রেখে সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে তবেই মিলবে চাকরি। আর এ বাজারে চাকরির দাম যে কতটা, তা তো সকলেরই জানা।
আরও শুনুন: ঘুমের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক! পোষ্য বিড়ালের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল মহিলার
বয়স নিয়ে কমবেশি সব মেয়েরাই একটু স্পর্শকাতর। সচরাচর মুখের উপর তাই এ বিষয়ে তাঁদের প্রশ্ন করা মানা। শিভ্যালরি বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি! তবে ইন্টারভিউয়াররা আর কবেই বা এসব নিয়মনীতির পরোয়া করেছেন। চাকরীপ্রার্থী মহিলাকে তাই সেই মোক্ষম প্রশ্নটিই করে বসেছিলেন পরীক্ষকেরা। বয়স কত? কাঙ্খিত চাকরিটি পাওয়ার লোভে বাধ্য হয়েই জবাব দিয়েছিলেন মহিলা। জানিয়েছিলেন বয়স। ভেবেছিলেন, এবার অন্তত ভুল হবে না। চাকরির নিয়োগপত্র নিয়েই বাড়ি ফিরতে পারবেন তিনি।
তবে শেষপর্যন্ত তেমনটা হল না। বয়স জানানোর পরেও মিলল না কাঙ্খিত চাকরিটি। আর তাতেই বেজায় চটলেন মহিলা। শুধু কি চটলেন, সংস্থাটিকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেলেন আদালত পর্যন্ত।
সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের এক বিখ্যাত পিৎজা প্রস্তুতকারী সংস্থার দপ্তরে ইন্টারভিউ দিতে যান জেনিস ওয়ালেশ নামে ওই মহিলা। ডেলিভারি কর্মীর চাকরি। আর সেই কাজের জন্যই তাঁকে ডাকা হয়েছিল ইন্টারভিউয়ে। তবে সেখানে প্রথমেই তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয় বয়সের কথা। ডেলিভারি কর্মীর চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের প্রাসঙ্গিকতা কী, তা বুঝতে পারেননি জেনিস। তবু উত্তর দেন তিনি। কিন্তু বাড়ি ফিরে জানতে পারেন সেই চাকরি জোটেনি তাঁর কপালে। জেনিশের দাবি, তাঁর বয়স জানার পরেই তাঁকে চাকরিপ্রার্থীর তালিকা থেকে বাতিল করে দেন পরীক্ষক। স্বভাবতই রেগে যান মহিলা। সরাসরি সংস্থার পিৎজা প্রস্তুতকারী সংস্থার সদর দপ্তরে গিয়ে নালিশ ঠুকে বসেন তিনি। না, খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাঁকে। ক্ষমা তো চাওয়া হয়ই, পাশাপাশি সংস্থার তরফে প্রায় চার লক্ষ টাকা মতো ক্ষতিপূরণও পান তিনি।
আরও শুনুন: জরুরি দরকার! ‘ফোন করে’ পুলিশকে তলব বাঁদরছানার, তারপর?
না, তাতেও অপমান ভুলতে পারেননি জেনিস। বয়স বা লিঙ্গের ভিত্তিতে এ ধরণের বৈষম্য তো একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়। এমনকি আয়ারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী এ ধরণের হেনস্তা রীতিমতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর সেসব জানার পরে পিৎসা প্রস্তুতকারী সংস্থাটির বিরুদ্ধে সোজা মামলাই ঠুকে বসেন ওই মহিলা। তাঁর দাবি, অনৈতিক ভাবে তাঁর বয়স জানার পরেই তাঁকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে সংস্থাটি। আদালতে অবশ্য নতুন করে ক্ষতিপূরণ পাননি জেনিস। তবে সংস্থাটিকে ভর্ৎসনা করেছেন বিচারক। সংস্থার তরফে অবশ্য দাবি, সংস্থার শাখা অফিসগুলিতে নিয়োগের দায়িত্বভার সামলায় আঞ্চলিক দপ্তরগুলিই। তার জেরেই এমন ঘটনা বলে দাবি সংস্থার। ভবিষ্যতে যাতে এমন সমস্যা আর না-হয়, সংস্থাটিকে সেদিকে নজর রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে।