কাজের কোনও লিঙ্গভেদ হয় না। নারী বা পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে কোনও কাজ তৈরিও হয় না। তবুও সমাজে নারীর কাজ আর পুরুষের কাজের মধ্যে এক অদৃশ্য গণ্ডি টানা হয়। আর সেই ছক অনুযায়ী ঘরের কাজকেই কেবল দাগিয়ে দেওয়া হয় মেয়েদের কাজ বলে। বিশেষ করে যেসব কাজে আপাতদৃষ্টিতে অনেকখানি শারীরিক শক্তির প্রয়োজন, সেইসব কাজ যেন পৌরুষের সমার্থক, এমনটাই ধারণা রয়েছে অনেকের। কিন্তু সেইসব ধারণাকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এই মহিলা। কী এমন করেছেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আজকের দিনে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন নারীরা, এ কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবুও কাজের বিভাজনের ক্ষেত্রে নারী আর পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি। কিন্তু সেই বৈষম্যের মূলেই আঘাত করেন এই মহিলার মতো আরও অনেকে। মেয়েদের দুর্বল বলে ব্যঙ্গ করেন যাঁরা, কিছু না বলেই যেন তাঁদের উদ্দেশে সপাট জবাব ছুঁড়ে দেন এই মহিলারা। কোনও চিৎকার নয়, স্লোগান নয়, কেবল নিজের কাজ দিয়েই প্রতিবাদে শামিল হন তাঁরা। আর সেই জোর সাহস জোগায় বাকিদেরও। সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তেমনই একটি ভিডিও।
আরও শুনুন: বয়সের বাধা পেরিয়ে ‘ইউনিফর্ম’ পরে নিয়মিত স্কুলে হাজিরা, নজির বৃদ্ধাদের
ভিডিওটিতে কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোনও বার্তাই দেওয়া হয়নি। সেখানে দেখা গিয়েছে, হাইওয়ের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে একটি গাড়ি। আর তার পাশ দিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসছে একটি ট্রাক। কিন্তু ট্রাকটি কাছে আসতেই চমক লাগে দর্শকের। এইরকম ভারী গাড়িগুলির চালকের আসনে সবসময়েই কোনও শক্তপোক্ত পুরুষের দেখা মেলে। কিন্তু এখানে যে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উলটো। দেখা যায়, চালকের আসনে বসে রয়েছেন এক মাঝবয়সি মহিলা। যেখানে মেয়েদের গাড়ি চালানোর উপরে আস্থাই রাখতে পারেন না অনেকে, সেখানে ওই মহিলা কিন্তু অকুতোভয়। স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়িটিকে স্বচ্ছন্দে ওভারটেক করে পাশ কাটিয়ে চলেও যান ওই মহিলা। আর সেই ওভারটেক করার সময়েই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর এই ট্রাক চালানোর ছবি তুলছেন কেউ একজন। সঙ্গে সঙ্গেই সেদিকে মুখ ফিরিয়ে একগাল হাসি উপহার দিয়ে যান তিনি। নিষ্পাপ সারল্যে মাখা সেই হাসিই নেটিজেনদের মন জয় করেছে। অবনীশ শরণ নামের এক আইএএস অফিসারের টুইট করা ওই ভিডিওটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে নেটদুনিয়ায়। ভিডিওর সঙ্গে একেবারে উপযুক্ত একটি ক্যাপশন-ও জুড়ে দিয়েছেন ওই অফিসার। হিন্দিতে লেখা সেই ক্যাপশনের বাংলা করলে দাঁড়ায়, পুরুষ না মহিলা কে চালাচ্ছেন, ট্রাকের তাতে কী-ই বা এসে যায়!
আরও শুনুন: ‘জোর করে’ খুলে নেওয়া হল দুই দলিত ছাত্রীর পোশাক, যোগী রাজ্যে কাঠগড়ায় খোদ শিক্ষিকা
দিল্লিতে কৃষক বিক্ষোভের সময় দেখা গিয়েছিল, ট্রাক্টর চালিয়ে দূরদূরান্ত থেকে রাজধানীতে এসে পৌঁছচ্ছেন কৃষকরমণীরা। কিছুদিন আগে সামনে এসেছিল ৭১ বছরের মানি আম্মার কথাও, ট্রাক থেকে শুরু করে এগারো রকমের ভারী বাহন চালানো যাঁর কাছে জলভাত। তাঁদের মতোই নীরবে, হয়তো অজান্তেও, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ রেখে গেলেন এই ট্রাকচালক মহিলা।