মেয়েদের কণ্ঠরোধের জন্য পুরুষের এত তোড়জোড়! এক্ষেত্রে ঘটল উলটপুরাণ। সবকিছু কানে এলেও কানে আসছে না পুরুষের গলার স্বর। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন, শুনে নিই।
চিরটাকাল জুড়ে অন্দরমহলের ছবিটা মোটামুটি একরকম। মেয়েদের গলার আওয়াজ যেন চৌকাঠের এপারে না আসে। নারীকণ্ঠ চাপা থাকবে পুরুষ কণ্ঠের তলায়। আর তাই, ইতিহাস সাক্ষী, বিদুষী নারী খনার জিভ কেটে ফেলতে হয় বরাহের আদেশে। জ্যোতিষশাস্ত্রে খনার পারদর্শিতা বরাহের জনপ্রিয়তায় থাবা বসাতে পারে, এই ছিল বরাহের আশঙ্কা। আসলে পুরুষতন্ত্র তো এই ভয়টাই পায়, যে, অন্য কোনও স্বর পাছে তার প্রতিস্পর্ধী হয়ে ওঠে।
সময় বদলেছে বটে, তবু বদলায়নি পরিস্থিতি। সাম্প্রতিক কাল তালিবান আগ্রাসনের কথাই মনে করুন না, যেখানে নারীর কণ্ঠ যাতে পুরুষের কান অবধি পৌঁছাতে না পারে, তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে নানা প্রকারে। এই-ই তো দস্তুর। কিন্তু এই চেনা ইতিহাসেরই যেন উলটো ঘটনা ঘটেছে এই মহিলার ক্ষেত্রে। তাঁর ব্যাপারটা এমনই যে, একনাগাড়ে কথা বলে গেলেও পুরুষের একটি কথাও প্রবেশ করতে পারে না তাঁর কানে। এখানেই শেষ নয়। আরও অবাক করা কাণ্ড হল, এত বড় শ্রবণ বিভ্রাটে আলাদাভাবে ঘটেনি কোনও বিপত্তি। কেন জানেন? কারণ যাঁর সঙ্গে এ-ঘটনা ঘটছে, তিনি সবকিছুই শুনতে পান, শুধু পুরুষের কণ্ঠ ছাড়া।
আরও শুনুন: বন্ধুর বকবকে কান ঝালাপালা! রোগের লক্ষণ নয় তো?
অবাক হলেন? ভাবছেন, তিনি নিশ্চয়ই বদ্ধ কালা? না, না, তিনি বধির নন। তিনি কিন্তু সবকিছুই শুনতে পান। কেবল শুনতে পান না পুরুষের বলা কথা। হ্যাঁ, ওই মহিলার দাবি, হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান, তিনি আর বাকি নানান শব্দ স্বাভাবিকভাবে শুনতে পেলেও শুনতে পাচ্ছেন না কোনও পুরুষের গলার শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটলেন হাসপাতালে। এমন অবাক করা বিষয় দেখে চিকিৎসকরাও পড়লেন মহা বিপদে। কারণ শ্রবণক্ষমতা হারিয়েছেন যিনি, তাঁর তো জগতের বাকি কোনও কিছুই শুনতে পাওয়ার কথা নয়। অথচ, জগৎসংসারের বাদবাকি সমস্ত শব্দ তাঁর কানে এলেও বাদ পড়ল শুধু বেচারা পুরুষদের কথাই? আর তারপর শুরু হল বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর মিলল হদিশ। চুলচেরা বিচার করে চিকিৎসকেরা জানতে পারলেন, ওই মহিলার শরীরে বাসা বেঁধেছে বিরলতম ব্যাধিগুলির একটি, যার নাম ‘রিভার্স-স্লোপ হিয়ারিং লস’।
আজগুবি নয়, একেবারেই সত্যি কথা। আক্রান্ত মহিলার নাম চেন। চিনের শিয়ামেন শহরের বাসিন্দা তিনি। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এই রোগটি নানা কারণেই হতে পারে। ভাইরাস আক্রমণ, কানের ভিতরে জমে থাকা তরল, অত্যধিক ক্লান্তি ইত্যাদি যে কোনও কারণেই এই ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এমনকী ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি টুয়েলভের অভাবও হতে পারে এই রোগের লক্ষণ। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভেদের ঘটনা তো হামেশাই ঘটে থাকে, কিন্তু কানের সমস্যাতেও যে এমন লিঙ্গভেদ হতে পারে, তা দেখে চমকেই গিয়েছেন সকলে।
ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক