নতুন সম্পর্কে জড়ানোর চাইতে তা ধরে রাখা আরও কঠিন। এমনটা মনে করেন অনেকেই। বিশেষত বিয়ের পর সংসারের দায়িত্ব সামলে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা অনেকের কাছেই কঠিন হয়ে ওঠে। যার ফলে ডিভোর্সের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন কেউ কেউ। সম্প্রতি এই বিবাহবিচ্ছেদ নিয়েই এক সমীক্ষা হয়েছিল। ঠিক কী ধরা পড়েছে সেখানে? আসুন শুনে নিই।
ভারতবর্ষ প্রাচীনতার দেশ। এখানে বৈবাহিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। এখনও অনেক জায়গায়, স্রেফ বিয়ে হয়নি বলে একসঙ্গে থাকার অনুমতি পান না যুগল। তাই অনেকেই মনে করে আমাদের দেশে খুব সহজে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো প্রায় অসম্ভব। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাও যেন ঠিক তেমনটাই নির্দেশ করছে।
আরও শুনুন: একসঙ্গে পুজো দেন হিন্দু-মুসলিম, কোথায় রয়েছে এমন মন্দির?
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে সবার আগে দরকার ভালোবাসা আর একে অন্যের প্রতি সম্মান। কিন্তু স্রেফ এইদুটো শব্দের জোরে সারাজীবন কেউ একসঙ্গে থাকতে পারেন না। প্রয়োজন হয় আরও অনেক কিছুর। নতুন একটা শব্দ তখন প্রায় অপরিহার্য হয়ে ওঠে জীবনে। ইংরাজিতে যাকে বলে অ্যাডজাস্টমেন্ট। অর্থাৎ পারস্পরিক বোঝাপড়া। একে অন্যের সমস্যা বুঝতে পারার ক্ষমতা। যা না থাকলে সম্পর্কে থাকার কোনও মানেই হয় না। বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো নয়ই। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন বিভিন্ন কারণে এই বোঝাপড়া বা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তাঁদের দাবি এর জেরেই বাড়ছে ডিভোর্সের হার। সাম্প্রতিক সমীক্ষাটিতে সেই পরিসংখ্যানই তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। কোন দেশে ডিভোর্সের হার কতটা তা জানতেই করা হয়েছে এই সমীক্ষা। মূলত এশিয়ার দেশগুলিকেই সেখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তুলনায় উঠে এসেছে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির কথাও। দেখা গিয়েছে, এই দেশগুলিতে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা যথেষ্ট বেশি। ইউরোপের অধিকাংশ দেশে প্রতিবছর ৭০ শতাংশেরও বেশি দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। কোনও দেশে সেই প্রবণতা দেখা যায় ৯৪ শতাংশ দম্পতির ক্ষেত্রে। তালিকায় রয়েছে পর্তুগাল, স্পেন, রাশিয়া, লাক্সেমবার্গ সহ একাধিক দেশ। কিন্তু এর ঠিক উলটো ছবি ধরা পড়ে এশিয়ার দেশগুলিতে।
আরও শুনুন: যুদ্ধের বীভৎসতার মাঝেই জন্ম বিরিয়ানির… নেপথ্যে কোন কাহিনি?
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এশিয়ার দেশগুলিতে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা কতটা সেই তথ্য। আর সেখানেই দেখা যাচ্ছে, তালিকায় সবার উপরে রয়েছে ভারত। এখানে ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই রয়েছে ভিয়েতনাম, তাজাকিস্তান, ইরানের মতো দেশগুলি। সব ক্ষেত্রেই বিবাহবিচ্ছেদের হার রীতিমতো কম। তবে ভারতে বিবাহবিচ্ছেদ কম হওয়ার নেপথ্যে বিভিন্ন মত উঠে এসেছে। একাংশের দাবি, দেশে বিচ্ছেদের হার কম হওয়ার কারণ সমাজ ব্যবস্থা। বিয়ে বলতে অনেকের কাছে স্রেফ দুজন মানুষের মিলন নয়, দুটো পরিবারের এক হওয়া। তাই বিচ্ছেদের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও অনেকক্ষেত্রেই তা ঘটিয়ে উঠতে পারেন না অনেকেই। আবার অনেকের দাবি এর নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষার প্রসঙ্গ। দেশের বড় সংখ্যক বিবাহিত নারী সম্পূর্ণভাবে তাঁর স্বামীর উপর নির্ভরশীল। তাই পরিস্থিতি যাই হোক, বিচ্ছেদের মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে সাহস পান না অনেক মহিলাই। আর সবশেষে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেও বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চান না অনেক দম্পতি। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে বিচ্ছেদের ঘটনা স্বাভাবিক নজরে দেখা হলেও, আমাদের দেশে অনেকেই তা মনে করেন না। তাই সামাজিক কটুক্তি বা লাঞ্ছনার ভয়েও বিচ্ছেদের কথা ভাবেন না অনেকেই। এমনটাও দাবি ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।