বিবাহবিচ্ছেদের পর স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে বাধ্য স্বামী, সাধারণত এমনটাই বলে থাকে দেশের আইন। কিন্তু সম্প্রতি উলটো পথে হেঁটে এক মহিলার খোরপোশের দাবি নাকচ করে দিল আদালত। মহিলার পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই এহেন সিদ্ধান্ত, রায় কর্ণাটক হাই কোর্টের। এ বিষয়ে ঠিক কী পর্যবেক্ষণ বিচারপতির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পরকীয়া সম্পর্ক এখন আর আইনের চোখে অপরাধ নয়। এমনকি তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে বিচ্ছেদের পথেও হাঁটতে পারেন কোনও দম্পতি। কিন্তু অন্য ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেও কি কোনও মহিলা তাঁর স্বামীর থেকে খোরপোশ আদায় করতে পারবেন? এ প্রসঙ্গেই সম্প্রতি আদালতের রায়, পরকীয়া করলে স্বামীর থেকে খোরপোশ দাবি করা যাবে না। এর আগে দিল্লি হাই কোর্ট বলেছিল, স্বামীকে ত্যাগ করার পর ওই মহিলা যদি প্রেমিকের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস না করেন, তাহলে তিনি খোরপোশ পাবেন। কিন্তু কর্ণাটক হাই কোর্টের সাফ মন্তব্য, পরকীয়া মানে সঙ্গীকে ঠকানো। সুতরাং গৃহহিংসা আইনেই দেখা হবে বিষয়টিকে। আর সেই মোতাবেক, কোনোভাবেই খোরপোশ দাবি করতে পারবেন না ওই মহিলা, এমনটাই রায় হাই কোর্টের।
আরও শুনুন: বিশ্বকাপ দেখার জন্য বিক্রি করেন নিজের বাড়ি! পাকিস্তানের ‘ক্রিকেট চাচা’-কে চেনেন?
ভারতীয় সংবিধান বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে একাধিক আইন রয়েছে। সেক্ষেত্রে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, বিচ্ছেদের পর যুগলের মধ্যে যিনি আর্থিকভাবে অক্ষম তাঁর দায়ভার নিতে হবে অন্যজনকে। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী এঁদের দুজনের মধ্যে যার উপার্জন কম তিনি চাইলে অন্যজনের থেকে মাসোহারার দাবি রাখতে পারেন। আইনের ভাষায় একেই খোরপোশ বলা হয়। সম্প্রতি কর্ণাটকের এক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এমনই খোরপোশের দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন এক মহিলা। প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা খোরপোশ চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেছেন মহিলার স্বামী। মামলা হাইকোর্টে ওঠে। সেখানে মহিলার স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সেই ব্যক্তির সঙ্গেই বর্তমানে মহিলা থাকেন। এদিকে মামলাকারী মহিলার দাবি, আইন মোতাবেক তাঁকে খোরপোশ দিতে হবে স্বামীকে। এতেই আদালতের রায়, পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানো এবং সেই ব্যক্তির সঙ্গেই থাকার দরুন, মামলাকারী মহিলা কোনোরকম খোরপোশ পাবেন না। এক্ষেত্রে মহিলার স্বামীকেই সমর্থন জানায় আদালত। তবে এ কথা শুনে অবশ্য ওই মহিলা ফের দাবি তোলেন, তাঁর স্বামীরও অন্যত্র সম্পর্ক রয়েছে। তবে সেই দাবি ধোপে টেকেনি, কারণ আদালতের সামনে মহিলার পরকীয়ার প্রমাণ পেশ করা হলেও, স্বামীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি ওই মহিলা। ফলে শেষ পর্যন্ত আদালত থেকে খালি হাতেই ফিরতে হল মহিলাকে।