খাবার কেনার পয়সা নেই। শেষমেশ ছেলের শিক্ষিকার কাছ থেকেই শ-পাঁচেক টাকা ধার চেয়েছিলেন বিধবা মহিলা। কিন্তু এই অনুরোধের বিনিময়ে ওই শিক্ষিকা যা করেন, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি মহিলা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তিন সন্তান, তার মধ্যে একজন দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। এর মধ্যেই হারিয়েছেন স্বামীকেও। তিন সন্তানের মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না মহিলা। নিরুপায় হয়ে সন্তানের শিক্ষিকার কাছেই হাত পেতেছিলেন তিনি। আর সেই অনুরোধের জেরেই ঘটল এমন ঘটনা, যাতে গোটা জীবনের মোড় ঘুরে গেল তাঁর। ৫০০ টাকার পরিবর্তে তাঁর হাতে এল মোট ৫১ লক্ষ টাকা।
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: বড়দিনের অদ্ভুত সাজ! বাড়ির বদলে ‘দাড়ি’ সাজিয়ে রেকর্ড ব্যক্তির
জানা গিয়েছে, কেরলের কুট্টানাড় এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলার নাম সুভদ্রা। বর্তমানে চরম দুরবস্থার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছিলেন বছর ৪৬ বয়সের ওই মহিলা। আসলে গোটা পরিবারে উপার্জন করতেন একমাত্র তাঁর স্বামীই। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট মাসেই তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর পর কার্যত অথই জলে পড়ে এই পরিবারটি। তিন সন্তানকে নিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন, তার কোনও উপায় দেখতে পাচ্ছিলেন না ওই মহিলা। তাঁর দুই ছেলে এখনও কলেজ এবং স্কুলের ছাত্র, তার উপর এক ছেলে সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। অসুস্থ ছেলেকে ফেলে কোনও কাজ করতে যাওয়াও সম্ভব ছিল না মহিলার পক্ষে। আর শুধু নিজেদের পেট চালানোই নয়, ওই মারাত্মক অসুখের চিকিৎসার খরচ জোগাতেও তাঁর নাভিশ্বাস উঠছিল। অসুস্থ ছেলের জন্য পাওয়া সামান্য সরকারি সাহায্য ছাড়া আর কোনও আয়ের পথ ছিল না মহিলার। কিন্তু হঠাৎ করে ম্যাজিকের মতোই তাঁর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। আর তার সমস্ত কৃতিত্বই তাঁর ছেলে অভিষেকের শিক্ষিকা, গিরিজা হরিকুমারের।
আরও শুনুন: বিয়ের জন্য পাত্রী চাই, মিছিল করে জেলাশাসকের দরবারে হাজির অবিবাহিত যুবকের দল
আসলে নেহাতই নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষিকার কাছে ৫০০ টাকা ধার চেয়েছিলেন মহিলা। এই হতভাগ্য পরিবারটির প্রতি এমনিই সহানুভূতি ছিল তাঁর। মহিলা যা চেয়েছিলেন, তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এভাবে যে তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়, সে কথাও তিনি বুঝেছিলেন। বিশেষ করে তাদের বাড়িতে গিয়ে সমস্ত অবস্থা নিজের চোখে দেখার পর বিহ্বল হয়ে পড়েন ওই শিক্ষিকা। এরপরেই নেট দুনিয়ায় এই পরিবারটির সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে ক্রাউডফান্ডিং শুরু করেন তিনি। আর তাতেই আশাতীত সাড়া মেলে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই উঠে আসে ৫১ লাখ টাকা। সন্তানদের পড়ানোর জন্য, তাদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য সুভদ্রাকে যে আরও কোনও দিনই কারও কাছে হাত পাততে হবে না, এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন গিরিজা। মানুষের পাশে মানুষ এসে দাঁড়ালে আসলে মিলিয়ে যেতে পারে অনেক সমস্যাই। সে কথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিল এই ঘটনা।