নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঁচবার মনোনীত হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর নাম। কিন্তু কোনওবারই শেষ পর্যন্ত এই সম্মান ওঠেনি তাঁর হাতে। কী কারণ ছিল তার নেপথ্যে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গান্ধীর সমস্ত জীবন এবং তাঁর কাজের মূল ভিত্তিই ছিল দুটি- অহিংসা এবং সত্য। কেবল মুখের কথায় নয়, নিজের সামগ্রিক কাজেই সেই আদর্শকে ধারণ করে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তাই বারে বারেই প্রশ্ন ওঠে, কেন এমন একটি মানুষকে স্বীকৃতি জানায়নি নোবেল কমিটি? সত্যি বলতে, নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত হয়নি এমনটাও তো নয়। একবার দুবার নয়, পাঁচবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়নের তালিকায় তাঁর নাম দেখা গিয়েছিল। ১৯৩৭, ১৯৩৮, ১৯৩৯- পরপর তিন বছরেই এই সম্মানের জন্য আলোচনায় উঠে এসেছিল গান্ধীর নাম। এর পরেও, ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছরেও নোবেলের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। আর ১৯৪৮ সালে, গডসের গুলিতে নিহত হওয়ার কিছুদিন আগেও নোবেলের মনোনয়ন তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন গান্ধী। অথচ আশ্চর্যের কথা হল, শান্তি এবং অহিংসার প্রচারে সারাজীবন কাজ করে যাওয়ার পরেও এই সম্মান ওঠেনি তাঁর হাতে।
আরও শুনুন: আড়াই লাখের সোনার চেন খেয়ে ফেলেছে ষাঁড়! কী হল তারপর?
এর পিছনে ঠিক কী কারণ ছিল, তা নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি। অনেকে মনে করেন, পুরস্কার দেওয়ার জন্য নোবেল কর্তৃপক্ষ যে প্রচলিত বিভাগগুলো অনুসরণ করেন, সেখানে গান্ধীকে আঁটানো যায়নি। সাধারণত রাজনৈতিক নেতা, ত্রাণকর্মী, আন্তর্জাতিক আইনের প্রবক্তা কিংবা আন্তর্জাতিক শান্তি বৈঠকের হোতা- এমন ধরনের মানুষরাই নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বিচার্য হন। গান্ধী এর কোনোটিই ছিলেন না। শান্তি এবং অহিংসাকে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, আপাত চোখে তা ছিল অনেক কঠিন, অভিনবও বটে। কোনও পরিস্থিতিতেই বলপ্রয়োগ করে নয়, বরং কথাবার্তার মাধ্যমেই নিজের মত বোঝাতে হবে, এমনটাই ছিল তাঁর নীতি। বিরোধীরা সংখ্যায় একজন হোক বা একশোজন, সকলকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে ভাবনার আদানপ্রদানের কথা বলতেন তিনি। অহিংসার এই পথ দীর্ঘমেয়াদি ঠিকই, কিন্তু তা আসলে ভেতর থেকে বদল আনে। চাপিয়ে দেওয়া পরিবর্তন নয়, এই ভেতরের বদলেই বিশ্বাসী ছিলেন গান্ধী। কিন্তু সেই পথ আর তার সাফল্য যেহেতু একনজরে চোখে পড়ে না, তাই গান্ধীর অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করাও হয়তো নোবেল কমিটির কাছে দুরূহ ছিল, এমনটাও মনে করেন অনেকে। পাশাপাশি যুদ্ধের বিরুদ্ধে গান্ধীর লাগাতার বিরোধিতা, ‘৪৭-এ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের সময় তাঁর শান্তির কথা বলে চলা, এইসব নিয়েও পাশ্চাত্য দুনিয়ার সংশয় ছিলই। আর এই সবকিছুই গান্ধীর নোবেল পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকদের অনেকে।