তিনি সৌভাগ্যের দেবী। তাঁর নামের অর্থই হল শ্রী। অথচ তাঁর বাহন কিনা পেঁচা। বাংলা বাগধারায় তথাকথিত অসুন্দর হিসেবে আখ্যায়িত এই ক্ষুদ্র পাখিটিকেই কেন দেবী লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে রাখা হয়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।
তথাকথিত সৌন্দর্যের বিপরীত মেরুতেই যেন তার অবস্থান। কুশ্রী বা অসুন্দর হিসেবেই গণ্য করা হয় প্যাঁচাকে। অথচ সেই প্যাঁচাই নাকি অতুল ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর বাহন। যে দেবীর মুখশ্রীকে আবার সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠা হিসেবেই দেখা হয়। পুরাণ বা লৌকিক কথা অনুযায়ী এমন অদ্ভুত সমাপতনের বেশ কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে।
আরও শুনুন: পক্ষীকুলে শ্রেষ্ঠ বলেই কি দেবসেনাপতির বাহন হল ময়ূর?
প্রথমেই বলতে হয় এর নেপথ্যে থাকা পৌরাণিক ব্যাখ্যাটি। সেই মতে, প্রাণীজগৎ সৃষ্টির পর দেবদেবীরা প্রায়শই মর্ত পরিভ্রমণে আসতেন। সেই সময় থেকে বিভিন্ন পশু পাখিরা তাদের বাহন হিসেবে নিযুক্ত হয়। কিন্তু পক্ষীকুলের মধ্যে প্যাঁচা ছিল এমন এক প্রাণী যে দিনের বেলায় কিছুই দেখতে পায় না। শুধুমাত্র রাতেই তার অবাধ বিচরণ। এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অন্য কোনও দেবতার বাহন হিসেবে তার ঠাঁই হয় না। তখন দেবী লক্ষ্মী ঠিক করেন, তিনি মর্ত পরিভ্রমণে যাবেন কেবলমাত্র রাতের বেলা। তিনি যে চঞ্চলা। তাঁকে পেতে হলে তাই অপেক্ষা পেরিয়ে আসতে হয়। কোজাগরী পূর্ণিমায় যে জেগে থাকবে দেবীর প্রতীক্ষায়, তাঁর কাছেই ধরা দেবেন লক্ষ্মী দেবী। কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো জাগতী’ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ হল ‘কে জেগে আছো?’ তাই তাঁর বাহন হিসেবে প্যাঁচাকেই উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: এত বড় চেহারায় গণেশের বাহন এইটুকু ইঁদুর! নেপথ্যে রয়েছে কী কারণ?
অন্যদিকে, বাঙালি শস্যের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীপুজো করে। কিন্তু ইঁদুর বা কীটপতঙ্গের আক্রমণে সেই ধান বা শস্য নষ্ট হয়ে যায় অনেকসময়েই। এদিকে প্যাঁচার সঙ্গে ইঁদুর বা বিভিন্ন কীটের খাদ্য খাদকের সম্পর্ক। তাই অনেকে মনে করেন এখান থেকেই দেবীর বাহন প্যাঁচা। আবার অনেকে মনে করেন দেবী লক্ষ্মীর গুণ পাওয়ার জন্য পেচক ধর্ম পালন করতে হয়।প্যাঁচা অন্যান্য পশু পাখির থেকে অনেক দূরে বাস করে। শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্যাঁচা দিনের বেলা ঘুমোয় এবং রাতের বেলা জেগে থাকে। জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে এই যোগৈশ্বর্য ও সাধন-সম্পদ রক্ষা করে প্যাঁচা। তাই এই গুণগুলি অর্থাৎ লক্ষ্মীর গুণ যদি কেউ পেতে চায় তাহলে তাকে এই ধর্ম পালন করতে হয়। একই সঙ্গে ধনের উপার্জন এবং ও ঐশ্বরিক চিন্তা- দুই গুণই প্যাঁচার মধ্যে বিদ্যমান। আর সেই কারণেই এই পাখিটি দেবীর বাহন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে বলে মনে করেন অনেকে।