ভারতবর্ষেই রয়েছে এমন কিছু মন্দির, যেখানে ঢুকতে পারেন না পুরুষেরা। এই নিষেধের আড়ালে রয়েছে কোনও গল্পকথা, মিথ বা কিংবদন্তি। চলুন শুনে নেওয়া যাক, কোন কোন মন্দিরে জারি আছে এমন আশ্চর্য নিয়ম, আর তার কারণই বা কী!
ভারতীয় সমাজে নিষেধের যত চোখরাঙানি, তার অধিকাংশই বরাদ্দ মেয়েদের জন্য। পুরুষের জন্য আবার নিয়ম কীসের! একেবারে সাধারণ একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, মন্দির। ছোট, বড়, জমকালো বা সাদামাটা, যেমনই হোক, মন্দিরের তো অভাব নেই ভারতবর্ষে। আর, কারও ক্ষেত্রেই ঈশ্বরের উপাসনা করায় কোনও বাধা থাকার কথাও নয়। অথচ, মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু বাধানিষেধ। ঋতুচক্র জনিত বিধান তো রয়েছেই। রয়েছে ধর্ম সংক্রান্ত কানুনও। পার্সি ফিরোজ গান্ধিকে বিয়ে করার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি পর্যন্ত পুরীর মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাননি। এসব কথা কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু উলটোটা শুনেছেন কখনও? জানেন কি, এমন মন্দিরও রয়েছে, যেখানে বছরের কোনও নির্দিষ্ট সময়ে, অথবা সারাবছরই, পুরুষের প্রবেশ নিষেধ?
কী ভাবছেন? এমন অদ্ভুত নিয়ম আবার কোথাকার? চমকে যাবেন না। এই দেশেই আছে এমন সব মন্দির। সেই কথাই বলা যাক।
আরও শুনুন: Ramayana: রামায়ণের আদিতে ছিলই না লক্ষ্মণরেখা! কোথা থেকে এল এই গল্প?
গৌহাটির কামাখ্যা মন্দিরের নাম তো সবাই শুনেছেন। অম্বুবাচীর সময় চার দিন এই মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই সময় দেবীর ঋতুকাল। তাই পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে এই কদিন। মন্দিরে পুজোআচ্চার ভার পড়ে মহিলা পুরোহিত এবং সন্ন্যাসীদের ওপর।
একইরকম নিয়ম বহাল আছে মুজফফরনগরের মাতা মন্দিরেও। এখানে অবশ্য নিয়ম আরও কড়া, মহিলা পুরোহিত ছাড়া কেউই এ সময় মন্দিরে ঢোকার অনুমতি পান না।
আবার ধরুন, কন্যাকুমারীতে রয়েছে দেবী কন্যাকুমারীর মন্দির। শক্তিপীঠের অন্যতম। কোনও নির্দিষ্ট সময় নয়, সারাবছরই এখানে পুরুষেরা প্রবেশ করতে পারেন না। পুরুষ বলতে কেবল সন্ন্যাসীরা যেতে পারেন মন্দিরে, তাও দরজা পর্যন্ত। বিবাহিত পুরুষের নো এন্ট্রি। কেন জানেন? কথিত আছে যে, বিয়ের দিন শিব নাকি পার্বতীকে অসম্মান করেছিলেন এখানে। সেই থেকেই এখানে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
ভারতবর্ষে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর অজস্র মন্দির থাকলেও ব্রহ্মার মন্দির প্রায় নেই। কিন্তু রাজস্থানের পুষ্করে যে ব্রহ্মা মন্দিরটি রয়েছে, খ্যাতির নিরিখে তা একাই একশো। আশ্চর্য ব্যাপার হল, যদিও মন্দিরের দেবতা পুরুষ, কিন্তু এই মন্দিরে ঢুকতে পারেন না বিবাহিত পুরুষেরা। হ্যাঁ, এমন নিয়মের কারণ তো রয়েছেই। ধোঁয়া থাকলেই যেমন তার পিছনে আগুন থাকে, তেমনই এই মন্দিরে বিবাহিত পুরুষদের ঢুকতে না দেওয়ার পিছনেও রয়েছে এক কিংবদন্তি।
দেবী সরস্বতীকে ব্রহ্মার স্ত্রী বলে মনে করা হয়। একবার নাকি কোনও এক যজ্ঞে ব্রহ্মার সস্ত্রীক অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু যজ্ঞস্থানে সরস্বতীর এসে পৌঁছতে দেরি হয়। দেরি দেখে ব্রহ্মা দেবী গায়ত্রীকে বিয়ে করে যজ্ঞ শেষ করেন। স্বভাবতই, সরস্বতী এসে এই কাণ্ড দেখে প্রচণ্ড চটে গেলেন। তিনিই অভিশাপ দিলেন, এই মন্দিরে কোনও বিবাহিত পুরুষ প্রবেশ করলে তার দাম্পত্যে ভয়ানক ক্ষতি হবে। সাধ করে ঘরে আগুন লাগাতে কে আর চায়, বলুন? তার চেয়ে দেবীর নিষেধ মেনে নেওয়াই ভালো।
এইরকম মন্দিরের তালিকায় রয়েছে কেরালার আত্তুকাল ভগবতী মন্দিরও। এখানকার প্রধান উৎসব আত্তুকাল পোঙ্গল। সেই সময় মহিলা ভক্তদের হাতেই চলে যায় মন্দির। তাঁদের সংখ্যাটা এত বেশি যে, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠেছে দশ দিন ব্যাপী এই উৎসবের। ধর্মীয় কারণে এককভাবে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের জমায়েত হয় এই মন্দিরে, মন্দিরটিকে এই খেতাব দিয়েছে গিনেস বুক।
তাহলে বুঝলেন তো! সমাজ যতই পুরুষতান্ত্রিক হোক, যতই নিয়মাকানুন থাক মেয়েদের জন্য, কোথাও কোথাও অন্তত পুরুষেরও হাত-পা বাঁধা।