বড়দিন মানেই সান্তার দেখা পাওয়া। স্লেজ গাড়ি ছুটিয়ে বরফের পাহাড় ঠেলে শহরে এসে পৌঁছবে সান্তা। আমাদের ইনবক্স ভরে উঠবে একরাশ শুভেচ্ছা বার্তায়। আর শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ ছাড়তে একেবারেই নিমরাজি আমরা। অন্য সব অনুষ্ঠান বা পাব্বনের আগেই আমরা ‘হ্যাপি’ শব্দখানা বসিয়ে দিই অনায়াসে। ‘হ্যাপি দুর্গাপুজো’ থেকে ‘হ্যাপি ছট’, ‘হ্যাপি ইদ’ কিংবা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। শুধু ক্রিসমাসের বেলায় বলি মেরি ক্রিসমাস? কিন্তু কেন? ভেবে দেখেছেন! কবে থেকে শুরু হল ‘মেরি’ বলার চল? আসুন, শুনে নিই।
বড়দিন! এই দিনে মা মেরির কোল আলো করে বেথেলহামে এসেছিলেন যিশু খ্রিস্ট। ক্রিসমাস মানেই খুশিতে ঝলমলে শহর। শীতের সোনারোদ মাখা দিনটা ভরে উঠবে কেকের মিষ্টি গন্ধ আর ক্যারলের সুরে। একটা সময় ছোটবেলাগুলো ভরে উঠত সান্তা ক্লজের ঝুলি ভরা উপহারের আদরে। আজও নিশ্চয়ই ওঠে। তবে ছোটবেলা ফুরোলেও ক্রিসমাস কিন্তু থেকে গিয়েছে। ক্রিসমাস মানেই এখন কার্নিভালের আমেজ আর ইনবক্স উপচে ভরা শুভেচ্ছা।
বাকি সব পার্বনের আগে ‘হ্যাপি’ জুড়ে দিলেও ক্রিসমাসের সঙ্গে ‘মেরি’ ব্যবহারের পাল্লাই ভারী। না এর সঙ্গে যিশুমাতা মেরির কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই।
বরং মেরি শব্দটার অর্থের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খুশি ও উল্লাসের সম্পর্ক। তাই ইংল্যান্ডের লোকেরা শব্দটিকে খুব একটা সম্ভ্রমের চোখে দেখেন না। খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্রিটেনে রাজ পরিবারের তরফে দেশবাসীকে যখন ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানানো হয়, তখন ‘মেরি’র বদলে ‘হ্যাপি’ শব্দকেই প্রাধান্য দেন রানি এলিজাবেথ।
আরও খবর: বড়দিনে আলোয় সেজে ওঠে বো ব্যারাক, গল্প বলে এক অন্য কলকাতার
তবে ক্রিসমাস কথাটির আগে ‘মেরি’ শব্দের ব্যবহার কিন্তু সুপ্রাচীন। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময় থেকে ক্রিসমাসের সঙ্গে ‘মেরি’ শব্দ ব্যবহার শুরু হয়। সপ্তম হেনরির প্রধানমন্ত্রী থমাস ক্রোমওয়েলকে লেখা বিশপ জন ফিশারের একটি চিঠি থেকে তেমনটাই জানা গিয়েছে।
ষোড়শ শতাব্দীর একটি ইংলিশ ক্যারল ‘উই উইশ ইউ আ মেরি ক্রিসমাস’ থেকে শুরু হয় সেই চল। চার্লস ডিকেন্সের লেখা ‘এ ক্রিসমাস ক্যারল’ নামে একটি উপন্যাসের হাত ধরে নয়া মাত্রা পায় এই ‘মেরি ক্রিসমাস’ শুভেচ্ছাবার্তাটি। ‘হ্যাপি’-র চেয়েও আরও একটু বেশি বোঝাতেই ব্যবহার হত এই শব্দযুগল। ক্রিসমাসের বিভিন্ন গান ও গল্প জুড়েই রয়েছে এই ‘মেরি’ শব্দের ব্যবহার।
আরও খবর: ‘সান্তা ক্লজ এক্সপ্রেসে’ চড়ে যাওয়া যায় সান্তার বাড়ি, সে এক আশ্চর্য মুলুক
ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, ‘হ্যাপি’ শব্দটি দিয়ে শুধুমাত্র মনের আনন্দ বোঝানো হয়। তার চেয়ে ‘মেরি’ শব্দটা দিয়ে উচ্ছ্বাসটা আরও বেশি করে বোঝানো যায়। সেখান থেকেই ‘মেরি’ শব্দ ব্যবহারের চল। তবে আঠারো ও উনিশ শতকের দিকে এই শব্দের ব্যবহার কমিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। সেই তুলনায় ‘হ্যাপি’ শব্দটি ছিল তাঁদের কাছে অনেক বেশি উচ্চশ্রেণির। আবার আমেরিকায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল মেরি শব্দের ব্যবহারই। বারবার নানা ধরনের পরিবর্তনের খেলা চলেছে এই ক্রিসমাসের শুভেচ্ছাবার্তা জুড়ে।
তবে মেরি হোক বা হ্যাপি, ক্রিসমাস মানেই একরাশ আনন্দের উৎসব। মিলনের মুহূর্ত। আর সেই উৎসবে প্রত্যেকে প্রত্যেককে শুভেচ্ছা জানান মন থেকেই। সেই আন্তরিকতাটুকুই সত্যি। হ্যাপি হোক বা মেরি- শব্দে কী বা আসে যায়!