জীবিত না মৃত? ঘুণাক্ষরেও কেউ এই সন্দেহ করেননি। নিজের ফ্ল্যাটের মধ্যে থাকেন তরুণী। ঘর থেকে ভেসে আছে টিভির আওয়াজ। ইলেকট্রিক বিলের পেমেন্ট হয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। তাহলে? বছর তিনেক পর একদিন খটকা লাগে প্রতিবেশীদের। আর দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাঁদের তো চক্ষু চড়কগাছ। মানুষ কোথায়? টিভির সামনে যে বসে আছে আস্ত কঙ্কাল! কিন্তু এ-ও কি সম্ভব! সম্ভব তো বটেই। নিজের চোখকে তাঁরা অবিশ্বাস করবেন কীভাবে! অবিশ্বাস্য, রহস্যময় তবু নিখাদ বাস্তব এই ঘটনা।
ঘর থেকে সারাদিন ধরে ভেসে আসে টিভির আওয়াজ। বড় আবাসন। তার মধ্যে একটা ফ্ল্যাটে থাকেন এক তরুণী। থাকেন নিজের মতো করেই। ফলে প্রতিবেশীদের তাঁকে নিয়ে কোনও মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু সেই তরুণীকে নিয়েই যে এমন রহস্য ঘনিয়ে উঠবে কে জানত! যে রহস্য আজও বিস্মিত করে বিশ্ববাসীকে।
তরুণীর নাম জয়সি ক্যারোল ভিনসেন্ট। তথ্য বলছে, মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে লন্ডনের একটি আবাসনের এক কামরার ফ্ল্যাটের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু সেই খবর জানা যায় তিন তিনটে বছর পরে। অর্থাৎ নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন ওই তরুণী, তা-ও অতগুলো বছর। তবু কাকপক্ষীও টের পায়নি। শুনতে প্রায় অবাস্তব লাগে এই ঘটনা। কিন্তু কে না জানে বাস্তব কখনও কখনও হার মানায় গল্পকথাকেও। জয়সির মৃত্যু সেরকমই একটি ঘটনা।
আরও শুনুন: মুখে খাবার তোলেননি টানা ৭৬ বছর! এখনও রহস্যে মোড়া যোগী প্রহ্লাদের কাহিনি
যে আবাসনে থাকতেন জয়সি সেখানে বহু লোকের বাস। তাঁদের অনেকেই আবার গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। এই পীড়িত মানুষদের নিয়ে কাজ করত যে সংস্থা সেখানেই কাজ করতেন জয়সি। সেই সূত্রেই এই আবাসনে তাঁর থাকা। কেন যে তিনি মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন, তা আজও অজানা। তবে নিজের মৃত্যুখবর যাতে মানুষের কাছে না পৌঁছায় সে পরিকল্পনা করেছিলেন জয়সি নিজেই। একটা সময় আচমকাই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। পরে তা ক্ষীন থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসে। বন্ধুরাও হাল ছেড়ে দেন। ভাবেন, জয়সি হয়তো বিশেষ কারণে নিজের মতো করে থাকতে চাইছেন। একই ঘটনা ঘটে পরিবারের সঙ্গেও। কোনও চিঠির উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দেন জয়সি। তাঁর এহেন ব্যবহারের ফলেই সকলের ধারণা হয় যে, জয়সি একা থাকতে চাইছেন। আসলে মানুষের মনে এই ধারণাটাই তৈরি করতে চেয়েছিলেন জয়সি।
আরও শুনুন: ৪৫ বছর পর মিলল গাড়ির হদিশ, ভেতরে ছড়ানো মানুষের হাড়… এ কোন রহস্য?
তাঁর বাড়িভাড়ার একটা অংশ দেওয়া হত সংস্থা সূত্রে। আর ইলেকট্রিক বিল বাবদ যে টাকা দেওয়ার, তাও যাতে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়, তেমন ব্যবস্থাই করেছিলেন ওই তরুণী। তারপর একদিন বেছে নেন মৃত্যুকে। কিন্তু সে খবর যাতে বাইরে না যায় তার একটা ব্যবস্থা করেন জয়সি। নিজের ঘরের টিভিটা চালিয়ে দেন, যাতে বোঝা যায় ঘরে যিনি আছেন তিনিই টিভিটি দেখছেন। এভাবেই চলতে থাকে। জয়সি যে মারা গিয়েছেন সে সন্দেহ বিন্দুমাত্র হয়নি প্রতিবেশীদের। অতবড় আবাসন। বহু লোকের নিত্য আনাগোনা। হাজারও শব্দের ক্যাকোফোনি। তার মধ্যে আলাদা করে যে জয়সির ফ্ল্যাটের দিকে নজর দিতে এমন কথা মাথায় আসেনি কারও।
বাকি অংশ শুনে নিন।